শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১

থাইরয়েড হরমোনের উপসর্গ ও চিকিৎসা

জীবন যাপন | লে. কর্নেল ডা. নাসির উদ্দিন আহমদ আগস্ট ৫, ২০২৩, ০২:১৪ পিএম
থাইরয়েড হরমোনের উপসর্গ ও চিকিৎসা

থাইরয়েড হরমোন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিপাকীয় হরমোন, যা আমাদের গলার ঠিক সামনে অবস্থিত। কোনো কারণে থাইরয়েড অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির নিঃসরণ বেড়ে গেলে শারীরবৃত্তীয় অসংখ্য পরিবর্তন ঘটে। এটাকে বলা হয় থাইরোটক্সিকোসিস। এটি একটি ভয়ানক অবস্থা। এ রোগ সাধারণত নারীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।

উপসর্গ: শরীরে থাইরয়েড হরমোন বেড়ে গেলে বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দেয়। যেমন– ওজন হ্রাস, অতিরিক্ত ঘাম নিঃসরণ, গরম সহ্য করার ক্ষমতা হ্রাস, বুক ধড়ফড় ইত্যাদি। এতে আক্রান্ত রোগীরা থাকে অস্থির প্রকৃতির, অতিসংবেদনশীল, খিটখিটে মেজাজের। তাদের হাতে কাঁপুনি শুরু হয়, নাড়ির গতি বেড়ে যায়। এ রোগে রক্তচাপও বেড়ে যেতে পারে। বিশেষ করে সিস্টোলিক ও ডায়াস্টোলিক রক্তচাপের মাঝে বিশাল পার্থক্য তৈরি হয়। যাদের আগে থেকে হৃদরোগজনিত সমস্যা আছে, থাইরোটক্সিকোসিস এটিকে আরও উসকে দেয়।

থাইরয়েড হরমোন বেড়ে গেলে নখ ক্ষয়ে যেতে থাকে। ত্বক হয়ে পড়ে উত্তপ্ত। হাতের তালু ঘামে। অনেক ক্ষেত্রে হাতের তালু হয়ে পড়ে লাল বর্ণের। মাথার চুল ঝরতে থাকে।

নারীদের মাসিক হয়ে পড়ে অনিয়মিত। এমনকি কখনও বন্ধ হয়ে যেতে পারে‌। বন্ধ্যত্ব নেমে আসতে পারে। বারবার গর্ভপাত হতে পারে। রোগীদের কখনও কখনও শ্বাসকষ্টের অনুভব জাগে। মাংসপেশির ক্ষয় বেড়ে যায়, সক্ষমতা কমে যায়। এ জন্য বসা থেকে দাঁড়াতে খুব কষ্ট হয়। এ রোগে হাড় ক্ষয় হতে থাকে দ্রুতগতিতে। শুরু হতে পারে হাড়ে হাড়ে ব্যথা। এ রোগে ঘন ঘন পায়খানা হতে পারে। দীর্ঘকালীন ঘন ঘন পায়খানার পেছনে হাইপার থাইরয়েডিজম একটি কারণ হিসেবে থাকতে পারে।

কোনো কোনো ক্ষেত্রে থাইরয়েড গ্রন্থি দু-তিন গুণ পর্যন্ত ফুলে যেতে পারে। সাধারণত গ্রেভস ডিজিজে এমনটি হয়ে থাকে। এসব রোগীর আরও কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। বিশেষ করে তাদের চোখের ওপরে থাইরয়েড হরমোন বিরাট প্রভাব ফেলে। অক্ষিগোলক বড় হয়ে যায়। কোটর থেকে চোখ বেরিয়ে আসার মতো অবস্থা হয়।

চিকিৎসা: পৃথিবীতে হাইপার-থাইরয়েডিজমের তিন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে। ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা, শল্য চিকিৎসা ও রেডিও আয়োডিন চিকিৎসা। রোগীর বয়স, লিঙ্গ, রোগের কারণ ও প্রকৃতির ওপরে নির্ভর করে চিকিৎসার ধরন। এ রোগে ক্ষেত্রবিশেষে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা নিতে হয়। থাইরয়েড হরমোনের তারতম্যের ওপর ভিত্তি করে ওষুধের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়।

লেখক: মেডিসিন স্পেশালিস্ট ও এন্ডোক্রাইনলোজিস্ট, সিএমএইচ, ঢাকা

Side banner