শুক্রবার, ১৮ জুলাই, ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২

কাঠলিচুর গুণাগুণ জানলে অবাক হবেন

জীবন যাপন জুলাই ৫, ২০২৫, ০৮:১০ পিএম
কাঠলিচুর গুণাগুণ জানলে অবাক হবেন

গ্রীষ্ম আর বর্ষায় প্রকৃতি আমাদের ঝুড়ি ভরে ফল উপহার পাঠায়। আম, কাঁঠাল, জাম, লিচু, সফেদা, জামরুল যেমন গাছ ভরে থাকে, তেমনি এ সময় আরও একটি ফল গাছে ছেয়ে থাকে। অনেকেই এর নাম জানেন না। অনেকেই আবার জানেন না কীভাবে এটি খেতে হয়। তবে দামে যতই সস্তা হোক না কেন, উপকারিতার দিক থেকে এ ফল ১০০ গোল দেবে জাম-লিচুকে। এই ফলটি হলো আঁশফল বা কাঠলিচু, যার বৈজ্ঞানিক নাম হলো Dimocarpus longan। এই ফলে প্রচুর শর্করা, ভিটামিন সি এবং খনিজ উপাদান আছে। চলুন তাহলে জেনে নিই কাঠলিচুর পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা।

কাঠলিচুর পুষ্টিগুণ

এই ফলে প্রচুর শর্করা, ভিটামিন সি এবং খনিজ উপাদান আছে। প্রতি ১০০ গ্রাম অংশে ৭২ গ্রাম পানি, ১০৯ কিলোক্যালরি শক্তি, ৮.০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, ২৮০ আইইউ ভিটামিন এ, ২.০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৬.০ মিলিগ্রাম ফসফরাস, ১.০ গ্রাম প্রোটিন ও ০.৫ গ্রাম ফ্যাট বিদ্যমান।

কাঠলিচুর উপকারিতা

8 কাঠলিচুতে থাকা কার্বোহাইড্রেট ও ফাইবার হজমে দারুণভাবে সহায়তা করে।

8 মনোপোজ-পরবর্তী নারীদের শরীরে প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম সরবরাহে কাঠলিচু খুবই উপকারী।

8 কাঠলিচুর আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড শরীরে বিটা ক্যারোটিনসহ প্রয়োজনীয় ভিটামিন শোষণে সহায়তা করে।

8 কাঠলিচু প্রচণ্ড ক্ষতিকর আলট্রাভায়োলেট রশ্মি থেকে শরীরকে রক্ষা করে।

8 কাশি ও টিউমার দমনে কাঠলিচু খুবই কার্যকর।

8 কাঠলিচুর শুকনো শাঁস পাকস্থলীর প্রদাহে, অনিদ্রা দূর করতে এবং বিষের প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

8 কাঠলিচু গাছের পাতা অ্যালার্জি, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস ও কার্ডিওভাসকুলার রোগ নিরাময়ে ব্যবহার করা হয়।

8 এই ফল উদরাময় নিবারক ও কৃমিনাশকে দারুণ কার্যকর।

8 এই ফল শারীরিক দুর্বলতা তাড়াতে অতুলনীয়। অবসাদ দূর করতেও এর দারুণ সুনাম।

8 কাঠলিচুতে থাকা লৌহ দেহের ক্ষয়পূরণে সহায়ক। দেহের মাংসপেশির ক্ষয়রোধ করতে কাঠলিচু খুবই উপকারী।

8 হৃদযন্ত্র সুরক্ষা এবং সক্রিয় রাখতে কাঠলিচু উপকারী ভূমিকা পালন করে। স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে আঁশফল খাওয়া উচিত।

8 কাঠলিচুর ভিটামিন ‘সি’ নানা ধরনের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রোগ প্রতিরোধে দেহকে শক্তিশালী করে তোলে।

8 কোনো ধরনের ফ্যাট না থাকায় ওজন কমাতেও এ ফল সাহায্য করে।

8 পাকা কাঠলিচুতে ১ দশমিক ৪২ শতাংশ প্রোটিন আছে। যেকোনো দুর্বলতায় ভুগলে চার-পাঁচ চা চামচ ফলের রস প্রতিদিন সকালে বা বিকেলে একবার খেলে দুর্বলতা কমে যাবে।

ত্বকের যত্নে কাঠলিচুর উপকারিতা

 

কাঠলিচু বার্ধক্য প্রতিরোধ করতে পারে। এতে উচ্চমাত্রায় ভিটামিন সি রয়েছে। এটি ছোপ ছোপ দাগ দূর, সূক্ষ্ম রেখা এবং বলিরেখা দূর করে। কোলাজেন গঠনে সাহায্য করে। যার ফলে ত্বকের নতুন কোষ গঠনে সাহায্য করে। এতে ত্বক সুস্থ থাকে। এক সমীক্ষায় দেখা যায়, কাঠলিচুতে থাকা ভিটামিন সি ত্বকের অক্সিডেটিভ ক্ষতি কমায়। তাই কাঠলিচু ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এটি ত্বকের ফাটল এবং পিলিং কমিয়ে দেয়। এটি ত্বকের শুষ্কতা কমায় এবং উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে সাহায্য করে।

কাঠলিচুর অপকারিতা

 

শুধু কাঠলিচুর উপকারিতা সম্পর্কে জ্ঞান রাখলেই হবে না, কেননা এই ফলের অপকারিতা বা কিছু ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। ১০০ গ্রাম কাঠলিচুতে ৬৫ গ্রাম চিনি থাকে। তাই যদি ডায়াবেটিস থাকে তাহলে এই ফল এড়িয়ে যাওয়া উত্তম। তাজা কাঠলিচুর তুলনায় শুকনো বা প্রক্রিয়াজাত ফলে বেশি চিনি থাকে, তাই এগুলো ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য নিরাপদ নয়।

কাঠলিচু চাষের সময় কীটপতঙ্গের আক্রমণের ঝুঁকি থাকে। ফলে ফসল রক্ষায় কৃষকরা কীটনাশক ব্যবহার করেন। এ কারণে ফলের খোসা দাঁত দিয়ে ছাড়ালে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। তাই ভালোভাবে ফলটি ধুয়ে খাবেন।

অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় কাঠলিচু খাওয়া নিরাপদ নয়। এটি মুখ শুষ্ক, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং পেটব্যথার কারণ হতে পারে, যা গর্ভাবস্থার জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই এ সময় কাঠলিচু এড়িয়ে চলাই ভালো।

Side banner