শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বারান্দাটা সাজিয়ে নিন নিজের মতো করে

জীবন যাপন ডিসেম্বর ২৩, ২০২১, ০৪:৪৬ পিএম
বারান্দাটা সাজিয়ে নিন নিজের মতো করে

বারান্দাভরা গাছ থাকবে, আর সাথে একচিলতে আকাশ- স্বপ্নটা কি খুব বেশি? উঁহু, একদম না। কিন্তু কীভাবে হবে এতোসব? খরচটা সাধ্যের মধ্যে থাকবে তো? এমন নানারকম প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে শুরুতেই ভয় পেয়ে যান অনেকে। আপনার সেই ভয় কাটিয়ে স্বপ্নটাকে সত্যি করতেই আজকের এই আয়োজন!

বারান্দা কি শুধুই গাছের হবে?
বারান্দাকে আপনি সাজিয়ে তুলতে পারেন আপনার মনের মতো করে। টবে গাছ লাগাতে পারেন। মাটির টব, পিতল, তামা বা পছন্দমতো যেকোন টব হতে পারে সেতা। গ্রিলের সাথে পাটের ষিকায় ঝুলন্ত টব রেখে তাতে লাগিয়ে দিতে পারেন নানারকম গাছ। টবগুলো সাধারণত লাল রঙয়ের হয়। তবে টবগুলোকে ইচ্ছে হলে বার্জারের ভিন্ন ভিন্ন রঙয়ের মধ্য থেকে পছন্দসই রঙ বেছে নিয়ে রাঙিয়ে দিতে পারেন। লতানো গাছ লাগিয়ে যদি সেই লতা গ্রিলে উঠিয়ে দেন, তাহলে সেটা লতিয়ে ছড়িয়ে যাবে পুরো বারান্দা। খুব দ্রুত বড় হয় এই লতানো গাছগুলো। তাই, কম সময়েই সবুজে ভরে যাবে আপনার গাছ। যদি বড় কাছ, এই যেমন- কাঠগোলাপের শখ থাকে, তাহলে বারান্দার উচ্চতার উপরে নির্ভর করে বড় একটি টবে এমন কাঠগোলাপ, আম বা পেয়ারার গাছও লাগিয়ে নিতে পারেন। মরিচ বা টমেটো গাছ খুব বেশি জায়গা নেয় না। বড় গাছের টবে লাগিয়ে নিতে পারেন এই ছোট্ট ফলদ গাছ। বারান্দাটা এতে করে হয়ে উঠবে আরও রঙিন। পুদিনা গাছও আজকাল বারান্দার বাগানে বেশ জনপ্রিয়তা কুড়িয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই নানারকম গাছের পাশাপাশি আর কী রাখা যায় বারান্দায়? পাথর

বারান্দার একটা কোনে পাথর আর মাটি জমিয়ে সেখানে কিছু গাছের বীজ ফেলে দিতে পারেন। এই পাথরগুলোকেও ইচ্ছে হলে নানান রঙ-এ রাঙিয়ে দিতে পারেন।

আসবাব
ছোট্ট দুটো চেয়ার, কিংবা একটা টেবিল রাখতে পারেন বারান্দায়। টেবিল আর চেয়ারের নিচে লতানো গাছ তুলে দিতে পারেন। বসার ব্যবস্থাকে আরেকটু আরামদায়ক করে তুলতে কয়েকটি কুশনও রাখতে পারেন বারান্দায়। চেয়ার না রাখতে চাইতে পড়ন্ত বিকেলে এক কাপ গরম চায়ে চুমুক দেওয়ার জন্য ঝুলন্ত দোলনাও রাখতে পারেন।

আলো
দিনের বেলায় নাহয় বারান্দা আলোকিত থাকবে। কিন্তু রাতের বেলা? রাতের জন্য বারান্দায় হালকা আলো লাগিয়ে নিন। নানান রঙয়ের আলো পাওয়া যায় বাজারে। গাছ আর আলো মিলে মায়াময় একটা পরিবেশ তৈরি হবে সহজেই।

বনের আবহ
ইচ্ছে করলে বার্জারের যেকোন একটি ইলিউশন ব্যবহার করতে পারেন আপনার বারান্দার দেয়ালে। সেখানে রাখতে পারেন গাছের ছবি, দিতে পারেন বনের আবহ। প্রাকৃতিক আবহের সাথে গাছ, দেখতে ঠিক গাছপালায় ভরা একটা বনের মতো দেখাবে। ঠিক যেমন্টা আপনি চান!

বাড়তি কিছু
ইচ্ছে করলে কিছু মাটির পছন্দসই পাত্রে মোম, কৃত্রিম ফুল ইত্যাদি রেখে দিতে পারেন। সাথে যোগ করতে পারেন পানি। আপনার বারান্দার সৌন্দর্য অনেকটা বেড়ে যাবে এতে।

খরচটা কেমন?
বারান্দা কীভাবে সাজাবেন তা নাহয় জানা গেল। কিন্তু খরচটা কেমন হবে? জেনে নিন!

টবের দরদাম

ঘরেই দুধ ও অন্যান্য জিনিসের কৌটা দিয়ে টব বানাতে পারেন আপনি। তাছাড়া, বাজারে নানারকম টব পাবেন আপনি। নার্সারিতে এমন টব সবসময় বিক্রি হয়। মাটির টব, পিতলের টব, প্লাস্টিকের টব, তামার টব- টব আছে হরেকরকম। টবের উপাদানভেদে এর দামটাও কম-বেশি হবে। প্লাস্টিকের ছোট টবগুলো ২০-৫০ টাকায় পাবেন আপনি। এগুলোর মধ্যে চাইলে ঝুলন্ত টবও বেছে নিতে পারেন। এছাড়া অন্যান্য টবগুলোও (ছোট, বড় ও মাঝারী) সাধারণত ১২০ থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে পাবেন আপনি।

গাছের দাম

গাছের প্রজাতিভেদে এর দাম ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। সাধারণত, গাছগুলোর দাম ২০-১০০ টাকা হয়ে থাকে। লতাজাতীয় গাছের দাম ২০ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে। কোন বড় গাছের কলম নিতে গেলে আপনাকে ২০০-৫০০ টাকা খরচ করতে হতে পারে।

কোথায় পাবেন?
গাছ, গাছের টব এবং অন্যান্য সরঞ্জাম আপনি হাতের কাছের যেকোন নার্সারিতেই পাবেন। তবে ভালোমানের গাছ এবং টব বেছে নিতে চলে যান ঢাকা কলেজ, কার্জন হল ইত্যাদি স্থানে। কলাবাগান, ধানমন্ডি, বকশি বাজার, আবাহনী মাঠের উলটো পাশ ইত্যাদি স্থানেও হরেকরকম গাছ এবং টবের পশরা পাবেন আপনি। নুড়ি পাথর খুঁজলে বাড়ির আশপাশ থেকেই বেছে নিতে পারবেন আপনি। এজন্য আলাদা কোন খরচের দরকার পড়বে না।

মনে রাখবেন
১. গাছের টবের নিচে যেন পানি এবং বাতাস চলাচলের জন্য ছিদ্র থাকে। এতে করে পানি জমে সেখান থেকে মশা এবং অন্যান্য পোকামাকড়ের জন্ম হবে না।

২. কিছু গাছ মাটি এবং পানিতে বাঁচে। কিছু গাছ শুধু পানিতে বা মাটিতে বাঁচে। কোন গাছটি বেছে নিচ্ছেন এবং সেটার জন্য কেমন পরিবেশ ভালো সেটা নিশ্চিত হয়ে নিন।

৩. আপনার বারান্দায় যথেষ্ট আলো আছে কিনা তা নিশ্চিত করুন।

৪. কিছুদিন পরপর টবের স্থান বদলে দিন। এতে করে গাছের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।

একটু হয়তো খরচ হবে, কিছুটা সময়ও লাগবে। তবে বারান্দায় বাগান করতে চাইলে এটুকু করার জন্য নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করুন। গাছের সবচাইতে বেশি দরকার পড়ে যত্নের। তাই, নিয়মিত বারান্দার গাছগুলোর যত্ন নিন। কয়েকমাস পর ফলাফল দেখে চমকে যাবেন আপনি!

Side banner