শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১

শিশুদের বাড়ছে ডায়াবেটিস, যা বলছেন চিকিৎসকরা

জীবন যাপন নভেম্বর ২৫, ২০২২, ০৮:০১ পিএম
শিশুদের বাড়ছে ডায়াবেটিস, যা বলছেন চিকিৎসকরা

চাঁদপুর থেকে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে ডায়াবেটিসের চিকিৎসা নিতে এসেছেন মাসউদুল হাসান। তিনি মাত্র ৮ বছর বয়স থেকেই টাইপ-১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। বর্তমানে তার বয়স ১৮ বছর। অর্থাৎ ১০ বছর ধরে তিনি মারাত্মক টাইপ-১ ডায়াবেটিসের সঙ্গে লড়ছেন। এ সময়ে একদিনের জন্যও ইনসুলিন নেওয়া বন্ধ করেননি তিনি। 

মাসউদুল হাসান বলেন, ডাক্তার বলেছে যতোদিন বেঁচে থাকব, ইনসুলিন নিতেই হবে। কারণ ইনসুলিন নিলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। না নিলেই হুটহাট বেড়ে যায়।

শুরুর দিকে দুইবেলা ইনসুলিন নিয়েছি, এখন তিনবেলা নিতে হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, শুরুতে ইনসুলিন নিতে কিছুটা খারাপ লাগলেও এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছি। খাবার-দাবারেও সবসময় নিজেকে অনেক সংযত রাখতে হয়। চিনি জাতীয় খাবার খাওয়া নিষেধ, যে কারণে বাড়িতে মিষ্টি জাতীয় কিছুই আনা হয় না।

কীভাবে জেনেছেন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শুরুতে আমার শরীর খুবই দুর্বল থাকতো, প্রায় সময়েই অজ্ঞান হয়ে যেতাম। ডাক্তার দেখানোর পরও ঠিক হচ্ছিল না। এরপর চাঁদপুর জেলা শহরে এক ডাক্তারকে দেখালে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানায় যে আমি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। তার পরামর্শেই আমি বারডেম হাসপাতালে আসি। এখানে এসেও শুরুতে ১৩ দিন ভর্তি ছিলাম। এখন নিয়মিত ইনসুলিন ব্যবহার করি, আর তিন মাস পরপর বারডেমে এসে ডায়াবেটিস পরীক্ষা করি। ইনসুলিনটা আমি এখান থেকে বিনামূল্যে পাই।

রাজধানীর সবুজবাগ সরকারি স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী লিভা, মাত্র ৯ বছর বয়সেই তার ডায়াবেটিস শনাক্ত হয়। বর্তমানে লিভার বয়স ১৬ বছর। দীর্ঘ সাত বছর ধরে ইনসুলিনই তার সুস্থ থাকার একমাত্র অবলম্বন। ডায়াবেটিস প্রসঙ্গে লিভার মা বলেন, ৯ বছর বয়স থেকেই লিভা খুবই অসুস্থ থাকতো। ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করে না, শারীরিক অবস্থা খুবই দুর্বল হয়ে গিয়েছিল। প্রথম যখন ডাক্তার দেখিয়েছি, তিনিও এর কারণ বুঝতে পারেননি। প্রথমবার ডাক্তার বললো, ওর কোনো সমস্যা নেই, ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করলে সুস্থ হয়ে যাবে।

চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তাকে বাসায় নিয়ে এসে ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করানোর পরও সে সুস্থ হচ্ছিল না। স্কুলে গেলে শিক্ষকরা ফোন দিত আপনার মেয়ে অসুস্থ, তাকে বাসায় নিয়ে যান। এরপর আবারো তাকে মুগদা হাসপাতালের এক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলাম। সেখানে সিটি ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা হয় এবং তার ডায়াবেটিস ৩৪ পয়েন্টে উঠে যায়। তখন সঙ্গে সঙ্গে আমাদেরকে বারডেম হাসপাতালে পাঠানো হলো। এখানে এসে আবারও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হলো, মেয়েকে ইনসুলিন দিলো, পরে তাকে বাসায় নিয়ে গেলাম। এখন আমার মেয়ের বয়স ১৬ বছর, দীর্ঘ সাত বছর ধরে সে নিয়মিত ইনসুলিন নিচ্ছে, বলেন লিভার মা।

পরে আর কোনো সমস্যা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আরও দুবার মেয়েকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছে। একবার মেয়ের প্রচুর বমি হয়, দ্রুত তাকে বারডেম হাসপাতালে নিয়ে আসি। তখন ডাক্তার বলেছিলো কমপক্ষে এক সপ্তাহ থাকতে হবে। কিন্তু চারদিন ছিলাম, টাকার সমস্যার কারণে এক সপ্তাহ থাকা সম্ভব হয়নি। কিছুটা সুস্থ হলে তাকে বাসায় নিয়ে যাই। 

তিনি আরও বলেন, ৯ বছরের একটা মেয়েকে যখন সকাল-সন্ধ্যা প্রতিদিন দুইবেলা ইনসুলিন নিতে দেখেছি, তখন ওর কান্নার সঙ্গে অনেক সময় নিজেও কেঁদেছি। মেয়ের শরীরের এমন কোনো জায়গা বাদ নেই যেখানে ইনসুলিনের সুঁই ঢুকেনি। মাঝখানে যতোবার সে অসুস্থ হয়েছে, হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়েছে। প্রায় সময়ই নিজেকে খুব অসহায় মনে হয়েছে। মনে মনে ভেবেছি জীবনে কী এমন পাপ করেছি, যার ফল হিসেবে আল্লাহ আমাকে আমার সন্তানকে দিয়ে শাস্তি দিচ্ছেন! নিজেকে খুবই অক্ষম মনে হয়।

নরসিংদী এলাকার একটি স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছে মেহেরুন্নেছা। প্রথম শ্রেণিতে পড়ার সময়ই তার ডায়াবেটিস ধরা পড়ে। শুরুতে ডায়াবেটিস আক্রান্ত মেহেরুন্নেছার ভয়াবহ অবস্থার বর্ণনা করে বাবা সামছুল ইসলাম বলেন, আমার মেয়ের বয়স যখন সাত বছর, তখন সে ক্লাস ওয়ানের বার্ষিক পরীক্ষা দেয়। হঠাৎ করেই সে একদিন অজ্ঞান হয়ে পড়ে। তাৎক্ষণিক তাকে সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাই। সেখান থেকে অচেতন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসা হয়। এখানেও প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসকরা বুঝতে পারছিল না কী হয়েছে। 

মেহেরুন্নেছার বাবা বলেন, তারা আমাকে জিজ্ঞেস করছিল মেয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় কোনো স্বপ্ন দেখেছে কি না, কেউ তাকে জোরে ধমক দিয়েছে কি না বা কোনো না কোনোভাবে মেয়ে ভয় পেয়েছে কি না। এখানেই শেষ নয়, এ অবস্থায় আমার মেয়েকে আইসিওতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তখনো ডাক্তাররা বুঝতেই পারেনি সে ডায়াবেটিস আক্রান্ত। এভাবে ঢাকা মেডিকেলে পাঁচ দিন যাওয়ার পর অবশেষে তার ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় ডায়াবেটিস ধরা পড়ে। এরপর সেখানে আরো পাঁচ দিন চিকিৎসার পর সবশেষে আমাদেরকে বারডেম হাসপাতালে আসতে বলা হয়। তখন থেকেই তার ‘ইনসুলিন যুদ্ধ’ শুরু হয়েছে।

ডাক্তার বলেছে, মেয়ের ডায়াবেটিসের ধরণটা খুবই জটিল। একবার ডায়াবেটিসের মাত্রা বাড়ে আরেকবার কমে। কোনো অবস্থাতেই তার ইনসুলিন মিস দেওয়া যাবে না। আমরাও শুরু থেকে খুবই সতর্কতার সঙ্গে চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা করছি। শুরুতে সে ইনসুলিন নিতে না চাইলেও এখন যে নিজে নিজেই নিতে পারে। 

২০২১ সালে আন্তর্জাতিক একটি জার্নালে শিশুদের ডায়াবেটিস নিয়ে একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়। ২০১১ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ঢাকা জেলায় ২০ বছর থেকে কম বয়সী শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে পরিচালিত গবেষণায় ডায়াবেটিস ও প্রি-ডায়াবেটিসের তথ্য রেকর্ড করা হয়। এই সময়ে ৭২৫টি জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে টাইপ-১ ডায়াবেটিস পাওয়া গেছে ৪৮২ জনের, যা শতকরা বিবেচনায় ৬৬ দশমিক ৫ শতাংশ। টাইপ-২ ডায়াবেটিস পাওয়া গেছে ২০৫ জনের, যা শতকরা বিবেচনায় ২৮ দশমিক ৩ শতাংশ। এছাড়াও ফাইব্রোক্যালকুলাস প্যানক্রিয়াটিক ডায়াবেটিস পাওয়া গেছে ১৪ জনের দেহে, যা ১ দশমিক ৯ শতাংশ এবং ডায়াবেটিসের অন্যান্য ধরণ ছিল ২৪ জনের, যা ৩ দশমিক ৩ শতাংশ।

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত শিশুদের ডায়াবেটিস পরবর্তী সবচেয়ে বড় জটিলতা হলো চোখের সমস্যা। চিকিৎসকদের মতে, ডায়াবেটিস আক্রান্ত শিশুদের সবচেয়ে বড় সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে রিফ্লেক্টিভ এরর বা দৃষ্টির ত্রুটি। অর্থাৎ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত শিশুরা একটা সময়ে দূরে এবং কাছ থেকে চোখে ঝাপসা দেখে।

চোখের সমস্যা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির (বাডাস) পেডিয়াট্রিক ডায়াবেটিস কেয়ার অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট ও বিশিষ্ট চক্ষু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন, জাতীয় পর্যায়ে এখনো ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের নিয়ে তেমন কোনো কাজ করা হয়নি। তবে গত দুই বছরে আমাদের বারডেম হাসপাতালে নরডিস্ক ইন্টারন্যাশনালের সহযোগিতায় ইউএসএইডের অর্থায়নে আমরা একটি মডেল প্রজেক্ট পরিচালনা করছি। প্রায় সাড়ে তিন হাজার ডায়বেটিস আক্রান্ত শিশুকে আমরা স্ক্রিনিং করেছি। 

তিনি বলেন, ডায়াবেটিস আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে আমরা যেসব কমন সমস্যাগুলো পাচ্ছি তা হলো- প্রায় ৪০ শতাংশ বাচ্চা চোখের সমস্যার কারণে আমাদের কাছে আসছে। দ্বিতীয়ত আসছে চোখে ছানি নিয়ে। আর তৃতীয় কারণ হিসেবে পেয়েছি ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি। প্রতি ১০০ জন টাইপ-১ ডায়াবেটিস আক্রান্ত শিশুর মধ্যে আমরা ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি রোগী পাচ্ছি। আর প্রতি ১০০ জন শিশুর চোখে আমরা ছানি পেয়েছি।

ডা. মাহবুব বলেন, যেহেতু না জানার কারণে ডায়াবেটিসটা শুরুতে নিয়ন্ত্রণহীন থাকে, তাদের চোখে খুবই দ্রুত ছানি চলে আসে। আর ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথিটা একটু লেট স্টেজে হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা যদি নিয়মিত না করায়, ডায়াবেটিস যদি নিয়ন্ত্রণহীন থাকে, তাহলে পাঁচ বছর পর সাধারণত রেটিনোপ্যাথিটা দেখা দেয়। আর ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির মধ্যে সবচেয়ে বিধ্বংসী হলো প্রোলিফেরিটি ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি। এটা একটা টাইপ-১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত বাচ্চাদের কোনো না কোনো পর্যায়ে গিয়ে হবে।

করণীয় প্রসঙ্গে এই চিকিৎসক বলেন, টাইপ-১ ডায়াবেটিস আক্রান্ত শিশুদের সুস্থ থাকার একমাত্র উপায় হলো ইনসুলিন। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, ইনসুলিন আমাদের কাছে অ্যাভেইলেবল থাকে না, এমনকি কিনতেও পাওয়া যায় না। এটা তাদের জন্য খুবই জটিল একটি মুহূর্ত। যদিও আমরা তাদেরকে বিনামূল্যে ইনসুলিন দিচ্ছি, এরপরও অসংখ্য শিশু ও পরিবার আছে, যাদের মধ্যে কোনো সচেতনতা নেই। যে কারণে দেখা যায় সময়মতো ইনসুলিন না দেওয়ায় তার ডায়াবেটিস বেড়ে গেছে।

তিনি আরও বলেন, ডায়াবেটিস প্রতিরোধে স্ক্রিনিংটা খুবই জরুরি। কিন্তু এখনও আমাদের প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে ডায়াবেটিস স্ক্রিনিংয়ের কোনো ব্যবস্থা নেই। এসব এলাকাগুলোতে যদি স্ক্রিনিংটা নিশ্চিত করা যায়, আমাদের প্রত্যেকে যদি নির্দিষ্ট সময় পরপর হেলথ চেকআপের মধ্য দিয়ে যায়, তাহলে দেখা যাবে যে ডায়াবেটিস হলে চিকিৎসাটাও খুব দ্রুত শুরু হবে। 

বারডেম মা ও শিশু হাসপাতালের চেঞ্জিং ডায়াবেটিস ইন চিল্ড্রেন প্রোগ্রাম (সিডিআইসি) এবং লাইফ ফর এ চাইল্ড প্রোগ্রামের (এলএফএসি) প্রোগ্রাম ম্যানেজার কামরুল হুদা বলেন, টাইপ-১ ডায়াবেটিস পুরোপুরি ইনসুলিন নির্ভর। আমরা জানি দেহের অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি হরমোন হলো ইনসুলিন। টাইপ-১ এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিসের পার্থক্যটাই হলো টাইপ-২ ডায়াবেটিসে ইনসুলিন লাগতেও পারে আবার নাও লাগতে পারে। টাইপ-২ তে মানুষের দেহে ইনসুলিন তৈরি হয়, কিন্তু এটি দেহে ঠিকমতো ফাংশন করে না। আর যখনই দেহের ইনসুলিন ঠিকমতো কাজ না করে বা নিয়মিত নতুন করে তৈরি না হয়, তখনই বাইরে থেকে ইনসুলিন নেওয়ার প্রয়োজন হয়।

তিনি বলেন, টাইপ-২ ডায়াবেটিস লাইফস্টাইল মোডিফিকেশনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কিন্তু টাইপ-১ এর ক্ষেত্রে এটা সম্ভব নয়। কারণ এই প্রকৃতির ডায়াবেটিসে কেউ আক্রান্ত হলে তার দেহে ইনসুলিন তৈরিই হয় না। এই অবস্থায় বেঁচে থাকতে হলে ইনসুলিন গ্রহণই তার একমাত্র অবলম্বন হয়ে দাঁড়ায়।

শিশুদের ডায়াবেটিসের কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, টাইপ-১ ডায়াবেটিস কেন হচ্ছে, এখন পর্যন্ত এনিয়ে কেউ কিছুই বলতে পারছে না। তবে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের পেছনে একটি বড় কারণ জেনেটিক। পরিবারে আমার বাবা-মায়ের আছে, এক্ষেত্রে আমার সম্ভাবনাটা বেশি। এছাড়াও স্থুলতা, অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাসও টাইপ-২ ডায়াবেটিসের একটি বড় কারণ। তবে টাইপ-১ ডায়াবেটিসে এটি কোনো ম্যাটার করে না। 

শিশুদের সেবা প্রসঙ্গে এই কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশে আসলে টাইপ-১ ক্ষেত্রে ন্যাশনাল কোনো রেজিস্ট্রি নেই। টাইপ-২ ক্ষেত্রেও নেই, তবে এরইমধ্যে বাংলাদেশ ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন একটি রেজিস্ট্রি করে ফেলেছে। আর টাইপ-১ নিয়ে আমাদের দুটি প্রোগ্রাম চালু আছে। একটি হলো চেঞ্জিং ডায়াবেটিস ইন চিলড্রেন প্রোগ্রাম, আরেকটি হলো লাইফ ফর এ চাইল্ড প্রোগ্রাম। এই দুটি প্রোগ্রামের মাধ্যমে আমরা সারা বাংলাদেশ কভার করি। সারাদেশে বাংলাদেশ ডায়াবেটিস সমিতির ৩৪টি সেন্টারের মাধ্যমে আমরা সারাদেশের শিশুদের সেবা দিয়ে থাকি। 

তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত আমাদের সারাদেশে ৭ হাজার ৪০০ জন রেজিস্ট্রার টাইপ-১ ডায়াবেটিস রোগী আছে, যাদের বয়স ২৬ বছর পর্যন্ত। আমাদের কাছে সব রোগীই শিশু অবস্থায় আসে, কিন্তু ২৬ বছর পর্যন্ত আমরা তাদেরকে সেবা দেই। যেমন ধরুণ, আমাদের এই প্রোগ্রামটা ১২ বছর ধরে চলছে, তখন যার বয়স ছিলো ১৪ বছর, এখন তার বয়স ২৬ বছর। 

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সচেতনতার তাগিদ দিয়ে বাডাসের সহকারী পরিচালক প্রকাশ কুমার নাথ বলেন, আমাদের মতো নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোর স্বাস্থ্যসেবা সংস্থাগুলোর অবস্থা বেশ দুর্বল। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত শিশুদের স্কুলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য সুষ্ঠু প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন হয় যা দেশগুলোতে অনুপস্থিত। ইনসুলিন, ইনজেকশন, রক্তে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ এবং উপযুক্ত পুষ্টির বিষয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো তেমন কোনো ভূমিকা পালন করে না। ডায়াবেটিস আক্রান্ত শিশুদের তদারকি করা এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্মীরা বাড়তি চাপ মনে করে। কারণ এসব দেশের স্কুলগুলোতে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত শিশুদের যথাযথভাবে তদারকির জন্য যথেষ্ট স্বাস্থ্যকর্মী নেই।

নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোর স্কুল এবং জাতীয় শিক্ষানীতিতে প্রায়ই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত শিশুদের বিশেষ চাহিদাগুলোকে স্বীকৃতি দিতে চায় না। রক্তের গ্লুকোজ নিরীক্ষণ, ইনসুলিন দেওয়ার ব্যবস্থা এবং জরুরি অবস্থার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তার অভাবের ফলে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত শিশুদের স্কুলের কার্যক্রম থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা হয়ে থাকে। ডায়াবেটিস সম্পর্কে স্কুলের কর্মচারী, সহছাত্র-ছাত্রী এবং অন্যান্য শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের অজ্ঞতা এবং ভ্রান্ত ধারণাগুলো প্রায়ই এ বৈষম্যের মূলে থাকে। শিশু ও কিশোর-কিশোরীরা মনে করে, তাদের ডায়াবেটিস আছে বলে স্কুলে তাদের সঙ্গে বিরূপ আচরণ করা হয়। ফলে তাদের কেউ কেউ প্রকাশ্যে রোগ সম্পর্কে জানাতে চায় না।

তিনি বলেন, টাইপ-১ ডায়াবেটিস আক্রান্ত শিশুদের ইনসুলিন চিকিৎসা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এসব শিশুদের মধ্যে ডায়াবেটিস সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। কারণ এসব শিশুরা ডায়াবেটিসের দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন জটিলতার ঝুঁকিতে থাকে। ডায়াবেটিস আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে অস্বাভাবিক হাইপার গ্লাইসেমিয়ার ঝুঁকি থাকে সবচেয়ে বেশি। এর সঙ্গে যুক্ত থাকে রেটিনোপ্যাথি, নিউরোপ্যাথি ও নেফ্রোপ্যাথির মতো বিভিন্ন মাইক্রো-ভাস্কুলার জটিলতার ঝুঁকি।

সূত্র: ঢাকাপোস্ট

আরও পড়ুন

Side banner