বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

যে লক্ষণে বুঝবেন শীতে ভিটামিন ডি’র ঘাটতি শরীরে

জীবন যাপন জানুয়ারি ৪, ২০২৩, ০৮:৩৭ এএম
যে লক্ষণে বুঝবেন শীতে ভিটামিন ডি’র ঘাটতি শরীরে

ভিটামিন ডি হাড় সুস্থ রাখতে, উদ্বেগ কমাতে ও সামগ্রিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভিটামিন ডি’র পর্যাপ্ত মাত্রা শরীরে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস শোষণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

এই ভিটামিন ইমিউন ফাংশন উন্নত করে, বিভিন্ন সংক্রমণ ও রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে। এমনকি হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্যেরও উন্নতি ঘটায়। এ ছাড়াও ভিটামিন ডি মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে। বিশেষ করে মেজাজ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। বিভিন্ন গবেষণার তথ্য মতে, ওজন কমাতেও সাহায্য করে ভিটামিন ডি। বুঝতেই পারছেন, ভিটামিন ডি শরীরের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

আর এই ভিটামিনের ঘাটতি হলে শরীরে একধিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে শীতে ভিটামিন ডি’র ঘাটতি বেশি হয়। কারণ এ সময় আবহাওয়া থাকে কুয়াশাচ্ছন্ন। কখনো রোদ ওঠে আবার কখনো আবহাওয়া থাকে ধোঁয়াশাচ্ছন্ন।

তাই এ সময় সূর্য থেকে ভিটামিন ডি গ্রহণের পরিমাণ কমে যায়। এ কারণে সচেতন থাকা জরুরি। তবে কীভাবে বুঝবেন যে আপনার শরীরের ভিটামিন ডি এর পরিমাণ কমে গেছে? রক্ত পরীক্ষা না করিয়েও শরীরে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি আছে কি না তা জানা যায় কয়েকটি লক্ষণ দেখেই। জেনে নিন ভিটামিন ডি কমলে শরীরে কোন কোন লক্ষণ প্রকাশ পায়-

বার্নিং টাং বা বার্নিং মাউথ সিনড্রোম
২০১৭ সালে মায়ো ক্লিনিকের ডিপার্টমেন্ট অব ডার্মাটোলজির এক সমীক্ষা অনুযায়ী, কারও শরীরে ভিটামিন ডি’র ঘাটতি থাকলে তারা ‘বার্নিং টাং বা বার্নিং মাউথ সিনড্রোমে’ ভুগতে পারেন। এই সিন্ড্রোমে ঠোঁট বা জিহ্বা অথবা মুখের নানান স্থানে পুড়ে যাওয়ার মতো ব্যথা বা জ্বালাভাব থাকে। এছাড়াও অনেকের মধ্যে অন্যান্য লক্ষণও দেখা যায় যেমন- মুখে অসাড়তা, শুষ্কতা ও অপ্রীতিকর স্বাদ। এসব কারণে খাবার খাওয়ার ইচ্ছাও কমতে শুরু করে।

ক্লান্তি ও দুর্বলতা
আপনার শরীর কি সব সময়ই ক্লান্ত ও দুর্বল লাগে? এমনটি হতে পারে ভিটামিন ডি’র অভাবে। পেশেন্ট ইউকের তথ্যমতে, শরীরে ভিটামিন ডি’র ঘাটতি দেখা দিলে পেশিগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে। এ কারণে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে বা বসা থেকে উঠে দাঁড়াতেও কষ্ট হতে পারে। এ ছাড়াও ধীরে ধীরে হাঁটা বা মাথা ঘোরার মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

হাড়ে বা জয়েন্টে ব্যথা
ভিটামিন ডি এর অভাবে শিশুদের ‘রিকেটস’ হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে শিশু দুর্বল হয় ও তার হাড়ের স্বাস্থ্য বিকাশ হয় না। বৈজ্ঞানিকভাবে ভিটামিন ডি ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস শোষণ করতে সাহায্য করে। যা হাড় গঠন ও শক্তিশালী করে। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে দুর্বল ও নরম হাড়ের বিকাশ অস্টিওম্যালাসিয়া নামক অবস্থার সঙ্গে যুক্ত। প্রায়ই হাড়ের বা জয়েন্টে ব্যথার কারণ হতে পারে ভিটামিন ডি’র ঘাটতি।

রক্ত পরীক্ষা
এছাড়া রক্ত পরীক্ষার সাহায্যে ভিটামিন ডি’র অভাব নির্ণয় করা যায়। এক্ষেত্রে দু’ধরনের পরীক্ষা আছে। তবে সবচেয়ে সাধারণ হলো ২৫-হাইড্রোক্সিভিটামিন ডি, যা সংক্ষেপে ২৫(ওএইচ)ডি নামে পরিচিত।

ভিটামিন ডি’র ঘাটতি পূরণে করণীয়
শরীরে ভিটামিন ডি’র ঘাটতি পূরণে নিয়মিত সূযরশ্মির সংস্পর্শে আসুন, তবে অতিরিক্ত নয়। সপ্তাহে ২-৩ বার মুখ, হাত ও পিঠে ১০-১৫ মিনিটের জন্য সূর্যরশ্মি লাগান। এ সময়ের মধ্যেই শরীর পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ডি শোষণ করতে পারবে। পাশাপাশি ভিটামিন ডি জাতীয় খাবার গ্রহণ করুন।

দৈনিক কতটুকু ভিটামিন ডি গ্রহণ করা উচিত?

  • এক বছরের ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ৪০০ আইইউ (ইন্টারন্যাশনাল ইউনিট)।
  • ৭০ বছর পর্যন্ত বাচ্চা, কিশোর ও প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে ৬০০ আইইউ।
  • ৭১ বছরের উর্ধ্বে ৮০০ আইইউ।

যেসব খাবারে আছে ভিটামিন ডি

বর্তমানে ভিটামিন ডি-এর অভাবে দেশের বহু মানুষের ব্রেস্ট ক্যানসার, কোলন ক্যানসার, প্রস্টেট ক্যানসার, হৃদরোগ, হতাশা ও ওজন বৃদ্ধি হচ্ছে। হতাশা, স্নায়বিক দুর্বলতার মতো রোগ দেখা যাচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এর মূল কারণ ভিটামিন ডি-এর অভাব। গবেষকরা বলছেন, কিছু খাবার রয়েছে, যা থেকে ভিটামিন ডি পাওয়া যাবে। আসুন জেনে নিই এমন কিছু খাবার সম্পর্কে-

বিভিন্ন ধরনের মাছ

বিভিন্ন মাছে রয়েছে ভিটামিন ডি। বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ স্যামন, কড মাছ, রুপচাঁদা, সার্ডিন, টুনা, ম্যাককেরেলে পাবেন ভিটামিন ডি। দৈনিক ভিটামিন ডি’র চাহিদার ৫০ শতাংশ পূরণ হতে পারে একটি টুনা মাছের স্যান্ডউইচ বা তিন আউন্স ওজনের একটি স্যামন মাছের টুকরো থেকে।

ডিম

ডিমে অল্প পরিমাণ ভিটামিন ডি রয়েছে। যাদের উচ্চ রক্তচাপ ও উচ্চ কোলেস্টেরলে ভুগছেন তাদের ডিমের কুসুম খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে।

দুধ

দুধ খুব বেশি ভিটামিন ‘ডি’ প্রদান করে না। তবে এটিকে ভিটামিন ‘ডি’ দিয়ে পরিণত করা যায়। কিছু দেশে গরুর দুধকে ফরটিফায়েড করে ভিটামিন ‘ডি’ যোগ করা হয়। এক কাপ দুধে প্রায় ১২৫ আইইউ ভিটামিন ‘ডি’ রয়েছে। এছাড়া ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম ও প্রোটিনের ভালো উৎস দুধ।

কমলার জুস

ভিটামিন ডির জন্য কমলার জুস খেতে পারেন। ভালো মানের কমলার জুস প্যাকেটেও পাওয়া যায়। তবে খাওয়ার আগে প্যাকেটের গায়ে দেখে নিন, কী কী উপাদান দিয়ে তৈরি।

সোয়া মিল্ক

সোয়া মিল্ক খাবারে রয়েছে অনেক প্রোটিন। তাই এই খাবার যে কোনও মানুষ খেতে পারেন। এই প্রোটিন শরীরের পক্ষে ভালো। এছাড়াও দেখা গিয়েছে যে নিয়মিত সোয়া মিল্ক খেলে শরীরে ভিটামিনের ঘাটতি কমে। এছাড়া আপনি টোফু খেতে পারেন। তবেই সুস্থ থাকতে পারবেন।

মাশরুম

মাশরুমের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি। এই মাশরুমে রয়েছে ভিটামিন ডি। পরটোবেললো মাশরুম সূর্যের আলোয় বড় হয়, এর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন ডি। নিয়মিত মাশরুম খেতে পারেন।

লিভার বা যকৃৎ

রান্না করা ২.৫ আউন্স বা ৭০ গ্রাম পরিমাণ গরুর কলিজায় ৩৬ আইইউ ভিটামিন ‘ডি’ থাকে, যা মুরগি বা অন্য কোনো প্রাণীতে থাকে না। তবে এতে কোলেস্টেরল বেশি বলে পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে।

গরুর মাংস

গরুর মাংসের লিভারে রয়েছে ভিটামিন ডি। ছাড়া দুধ থেকে ভিটামিন ডি পেতে পারেন।

চিংড়ি মাছে

চিংড়ি মাছেও ভালো পরিমাণে থাকে ভিটামিন ডি। চিংড়ি মাছ হল দারুণ এক খাদ্য। এই খাদ্যটির মধ্যে রয়েছে ভালো পরিমাণে প্রোটিন। এবার দেখা গিয়েছে যে চিংড়িতে রয়েছে অনেকটা ভিটামিন ডি। এই ভিটামিন শরীর ঠিক করতে পারে।

পনির

পনির বা চিজেও ভিটামিন ডি এর চাহিদা মেটানো সম্ভব। তবে প্রচুর লবণ দেয়া পনির এড়ানোই ভালো।

সাপ্লিমেন্টারি

উচ্চমাত্রার ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার সচরাচর না মেলায় সাধারণ মানুষ এর চাহিদা পূরণ করতে পারে না। তাই ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্টারির প্রয়োজন পড়ে। কারোর ভিটামিন ডি’র মাত্রা কম থাকলে নিজে নিজে নয়, বরং চিকিৎসকের পরামর্শে সাপ্লিমেন্টারি গ্রহণ করা উচিত।

সূর্যের আলো ভিটামিন ডি-এর অন্যতম উৎস

সূর্যের আলো ভিটামিন ডি-এর অন্যতম উৎস। সূর্যের কড়া আলোতে না গিয়ে হালকা রোদ গায়ে লাগান। ভিটামিন ডি-এর অভাব পূরণের জন্য হালকা রোদে সামান্য ব্যায়ামও করতে পারেন। সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত রোদ সবচেয়ে ভালো। এই সময় সূর্যের যে আলো আসে, সেটি ভালো। সব ঋতুতেই যদি আমরা কিছুক্ষণ রোদে বসি, পাঁচ মিনিট থেকে আধা ঘণ্টা পর্যন্ত সপ্তাহে দুবার, তাহলে উপকৃত হওয়া যায়।

উচ্চমাত্রার ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার সচরাচর না মেলায় সাধারণ মানুষ এর চাহিদা পূরণ করতে পারে না। তাই ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্টারির প্রয়োজন পড়ে। কারোর ভিটামিন ডি’র মাত্রা কম থাকলে নিজে নিজে নয়, বরং চিকিৎসকের পরামর্শে সাপ্লিমেন্টারি গ্রহণ করা উচিত।

সূর্যের আলো ভিটামিন ডি-এর অন্যতম উৎস

সূর্যের আলো ভিটামিন ডি-এর অন্যতম উৎস। সূর্যের কড়া আলোতে না গিয়ে হালকা রোদ গায়ে লাগান। ভিটামিন ডি-এর অভাব পূরণের জন্য হালকা রোদে সামান্য ব্যায়ামও করতে পারেন। সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত রোদ সবচেয়ে ভালো। এই সময় সূর্যের যে আলো আসে, সেটি ভালো। সব ঋতুতেই যদি আমরা কিছুক্ষণ রোদে বসি, পাঁচ মিনিট থেকে আধা ঘণ্টা পর্যন্ত সপ্তাহে দুবার, তাহলে উপকৃত হওয়া যায়।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

Side banner