শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১
মৌরির জানা অজানা কিছু গুণাগুণ সম্পর্কে আজ আলোচনা করবো। শরীরের জন্য খুবই উপকারী এ ছোট্ট উপাদান। মৌরি খেতে অনেকেই পছন্দ করেন। বিশেষ করে হোটেল বা রেস্টুরেন্টে আহারের পর মৌরি খেতে দেওয়া হয়। মৌরি দেখে অনেকেই জিরা ভেবে ভুল করেন।
মৌরিতে আছে প্রচুর পরিমাণে কপার, আয়রন, পটাশিয়াম, সেলেনিয়াম, জিংক ও ম্যাগনেশিয়াম। এ ছাড়া আছে ভিটামিন এ, সি, ই ছাড়াও একাধিক বি ভিটামিন। তা ছাড়া মৌরি একটি আঁশসমৃদ্ধ মসলা, যাতে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ফ্ল্যাভনয়েড নামের বিশেষ উপাদান। ফ্ল্যাভোনয়েডগুলো খাদ্যতালিকায় প্রধানত গ্লাইকোসাইড এবং পলিমার হিসেবে দেখা যায়, যা হজম ট্র্যাক্টের পরিবর্তনশীল এক্সটেন্টগুলোতে অবনমিত করে।
যখন খুব গরম অনুভব করবেন তখন এক চা–চামচ পরিমাণ মৌরি ধীরে ধীরে চিবিয়ে খেতে ফেলুন, এতে পেটের ভেতর জমে থাকা বায়ু বেরিয়ে যাবে, শরীর সঙ্গে সঙ্গে শীতল হয়ে যাবে। মৌরির সঙ্গে পেটের দারুণ ভালো সম্পর্ক। মৌরি পেটে গেলেই শরীর শীতল করার কাজ শুরু করে দেয়।
মৌরি পানিতে ভিজিয়ে রাখুন ২ ঘণ্টা। সঙ্গে রাখুন মিচরি। এরপর তাতে দিন লেবু, বিটনুন। সঙ্গে দিন বরফের কিউব। এই পানি গরমের দিনে পেট ঠাণ্ডা রাখতেও সাহায্য করে।
মৌরিতে ফাইবার থাকে, যা অনেকক্ষণ ধরে পেটভর্তি রাখতে সহায়তা করে। খিদে পাওয়া থেকে বিরত করে মানুষকে। মৌরিতে ক্যালোরি কম যায় শরীরে। এর ফলে কমে ওজন।
মৌরি হজমশক্তি বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করে। হজম যদি সহজে হয়ে যায়, তাহলে মেদ ঝরাতেও সমস্যা হয় না। এতে থাকে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, যা মেদ ঝরাতে সাহায্য করে।
হার্ট যদি ভালো রাখতে চান, তাহলে মৌরির গুরুত্ব আপনাকে মানতেই হবে। ফাইবার সমৃদ্ধ এই খাবার। মৌরি শাক হার্টের পক্ষে ভালো। এটি হার্ট ভালো রাখতেও বেশ কার্যকরী ফল দেয়। এতে কোলেস্টেরলও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
মৌরি রক্ত পরিষ্কার করে ও শরীরে গ্যাসের সমস্যা কমিয়ে দেয়। ফলে শরীর থাকে চনমনে।
পিরিয়ডের সময় তলপেটে ও কোমরে অতিরিক্ত ব্যথা অনুভব করেন অনেক নারী। এ সমস্যা থেকে সাময়িক মুক্তি পেতে অনেকেই ব্যথানাশক ওষুধ খান। যদিও বেশি ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া ছাড়াই পিরিয়ডের ব্যথায় মুক্তি পেতে প্রথমদিন থেকেই মৌরি খেতে শুরু করুন।
জেনে রাখুন, সেসব শিশুকে প্রতিদিন নিয়মিত এক চা–চামচ মৌরি এক কাপ পানিতে জ্বাল দিয়ে আধা কাপ হলে তা নামিয়ে চায়ের মতো করে খাওয়ালে শিশুর হজমশক্তিও ঠিক হবে, সেই সঙ্গে দৃষ্টিশক্তির দুর্বলতা কেটে যাবে এবং চশমা ছাড়তে পারবে।
যেসব মা সদ্য সন্তান প্রসব করেছেন, তাঁদের প্রায়ই দেখা যায় শিশু বুকের দুধ পাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে আমাদের প্রাচীন পদ্ধতি মৌরি খেলে কাজ হবে। এ ক্ষেত্রে আধা চা–চামচ মৌরি চিবিয়েও খেতে পারেন অথবা এক চা–চামচ মৌরি এক কাপ পানিতে জ্বাল দিয়ে আধা কাপ হলে তা নামিয়ে চায়ের মতো করে খেতে পারেন। এতে করে বুকে দুধ বাড়বে।
মৌরির ভেজানো পানি অথবা এক চা–চামচ মৌরি এক কাপ পানিতে জ্বাল দিয়ে আধা কাপ হলে তা নামিয়ে চায়ের মতো করে খেলে কৃমিনাশ হবে। এর ফাইবার পেট পরিষ্কারে সহায়তা করে, যাদের পেট ঠিকমতো পরিষ্কার হয় না, তারা খাবারের পর একটু মৌরি চিবিয়ে খেলে পেট পরিষ্কারে সহায়তা করবে।
যাঁরা শরীরের নানা ধরনের ব্যথা নিয়ে থাকেন, বিশেষ করে হাঁটু, কোমরের জয়েন্টগুলোর ব্যথা সারতে চায় না। এ ক্ষেত্রে নিদান হিসেবে মৌরির জুড়ি নেই। এক বাটি শর্ষে তেলে একটু মেথি, এক টুকরা আদা, এক কোষ রসুন এবং এক চা–চামচ মৌরি দিয়ে তেলটা গরম করে আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে দিলে ব্যথা কমে আসবে আর সেই সঙ্গে এক চা–চামচ মৌরি এক কাপ পানিতে জ্বাল দিয়ে আধা কাপ হলে তা নামিয়ে চায়ের মতো করে খেলে শরীরের ব্যথা দূর হবে।
লেখক: খাদ্য, পথ্য ও আকুপ্রেশার বিশেষজ্ঞ।
Design & Developed by 
