শনিবার, ০৫ অক্টোবর, ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১
প্রতিটি দেশের মতো আমাদের দেশেও রয়েছে ভবন নির্মাণের অনুমোদনের নিয়ম ও প্রবিধান। রাজধানী ঢাকা শহর হোক কিংবা অন্যান্য জেলা শহর বা গ্রামাঞ্চল, বাসা-বাড়ি বা কর্পোরেট ভবন নির্মাণের আগে কিছু অনুমোদন নিতে হবে। ভবন নির্মাণের জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সংস্থা নীতি নির্ধারণ করে দিয়েছে- রাজধানী ঢাকার জন্য রাজউক, বিভাগীয় শহরের জন্য সিটি করপোরেশন, জেলা শহরের জন্য পৌরসভা।
রাজধানী ঢাকাকে পরিবেশ বান্ধব ও মানুষের বাসযোগ্য করতে সব ভবনের নকশার অনুমোদন দিয়ে থাকে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা রাজউক। এখানে ভবন তৈরি করতে হলে সরকারি বিধি-নিষেধ ও ‘ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৮’ মেনে চলতে হবে। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন এই প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কাজই হচ্ছে বিভিন্ন ভবন নকশার অনুমোদন দেওয়া। যদি আপনার যথাযথ অনুমোদন না থাকে তাহলে কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন ধরনের শাস্তি আরোপ করতে পারে।
অনুমোদন ব্যতীত যে কোনো ভবন নির্মাণে জরিমানা ও জেল হতে পারে। এমনকি আপনার নবনির্মিত ভবন ভেঙে ফেলা হতে পারে। নিয়ম মেনে ইমারত বা ভবন নির্মাণের পূর্বে সংশ্লিষ্ট অফিস থেকে অনুমতি গ্রহণ করতে হয়। একে বলা হয় ‘ইমারতের নকশা ও বসবাস উপযোগিতার অনুমোদন’। এই বিধিমালার অধীনে ইমারতের নকশা ও বসবাস উপযোগিতার অনুমোদন পদ্ধতি নিম্নে উল্লিখিত ৩টি পর্যায়ে সম্পন্ন হবে।
ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র
১) ছাড়পত্র ও নির্মাণ অনুমোদনের আবেদনপত্র দাখিলের পূর্বে, কর্তৃপক্ষের আওতাভুক্ত পরিকল্পিত এলাকার বহির্ভূত যে কোনো ভূমিতে উন্নয়নের জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট হতে ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র গ্রহণ করা জরুরি।
২) জমির মালিকানা সংক্রান্ত কাগজপত্রসহ প্রস্তাবিত জমি ব্যবহার ছাড়পত্রের জন্য নির্ধারিত ফি সহ নির্ধারিত ছকের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে।
৩) আবেদনকারীর স্বাক্ষরিত ৩ (তিন) কপি আবেদনপত্র এবং এর সঙ্গে ৩ (তিন) কপি ১:৫,০০০ অথবা ১:১০,০০০ স্কেলে প্রণীত সাইটের জরিপ নকশা সংযোজন করতে হবে, যাতে জমি চিহ্নিত করার মতো আর.এস/সি.এস ম্যাপসহ একটি খসড়া স্থানিক নকশা থাকবে।
ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্রের মেয়াদ হবে অনুমোদনের তারিখ হতে ২৪ (চব্বিশ) মাস। ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্রের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেলে নতুন করে ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্রের অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে।
নির্মাণ অনুমোদনপত্র
১) নতুন অবকাঠামো নির্মাণ করতে বা বিদ্যমান অবকাঠামো পরিবর্তন,পরিবর্ধন বা সংযোজন করতে ইচ্ছুক হলে আইন অনুযায়ী নির্মাণ অনুমোদনপত্র গ্রহণ করতে হবে।
২) যথাযথ যোগ্যতাসম্পন্ন কারিগরি ব্যক্তিবর্গ নকশায় অমুদ্রিত স্বাক্ষর প্রদান করবে এবং কারিগরি ব্যক্তিবর্গকে তাদের পেশাজীবী সংগঠনের সদস্য নম্বর ও রেজিষ্ট্রেশন নম্বর নকশা ও দলিলাদির নির্ধারিত স্থানে উল্লেখ করতে হবে।
৩) নির্মাণ অনুমোদনপত্রের জন্য আবেদনপত্রের সঙ্গে নিম্মলিখিত দলিলাদি (A3 বা A4 সাইজের কাগজে) নকশাসহ সংযুক্ত করে উপস্থাপন করতে হবে। যেমন-ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্রের অনুলিপি, ফি প্রদানের রশিদ, আবেদনকারীর বৈধ মালিকানার প্রমাণস্বরূপ দলিলাদির সত্যায়িত অনুলিপি, যোগ্যতাসম্পন্ন কারিগরি ব্যক্তি কর্তৃক প্রদত্ত মৃত্তিকা পরীক্ষা প্রতিবেদন, অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের ক্ষেত্রে তলাওয়ারী আবাস-ইউনিটের সর্বমোট সংখ্যা, প্লটের ক্ষেত্রফল, ভূমি আচ্ছাদন, সেট ব্যাক স্থানের পরিমাপ এবং মোট তলার সংখ্যা, প্রকল্পে নিয়োজিত স্থপতির অভিজ্ঞতার প্রমাণস্বরূপ সংশ্লিষ্ট পেশাজীবী প্রতিষ্ঠানে কারিগরি ব্যক্তি হিসেবে তালিকাভূক্ত সার্টিফিকেট এর অনুলিপি।
৪) A সিরিজের (A0 হইতে A4 সাইজ) কাগজে মেট্রিক মাপে সব নকশা প্রণয়ন করতে হবে।
৫) নকশাসমূহে নিম্মলিখিত তথ্য সন্নিবেশিত থাকতে হবে:
৬) মৌজার নাম এবং সি.এস./আর.এস./এস.এ. দাগ নম্বর বা প্লট নম্বরসহ সাইট যে থানার অন্তর্গত, তার নাম।
৭) সাইট প্ল্যান বা এলাকা নকশা নূন্যতম ১:৪০০০ স্কেলে অঙ্কিত হবে এবং এতে নিম্নলিখিত তথ্য থাকতে হবে। যেমন- সাইট যে মৌজায় অবস্থিত, সাইটের অবস্থানসহ এর সি.এস. ম্যাপ এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে আর.এস. বা এস.এ. ম্যাপের অংশবিশেষ অথবা সরকার বা অনুমোদিত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নকৃত প্রকল্পের ক্ষেত্রে সাইটের অবস্থানসহ প্রকল্প এলাকা নকশার অংশবিশেষ এবং সাইটের দাগ বা প্লট এবং পার্শ্ববর্তী দাগ বা প্লটসমূহের অবস্থান নির্দেশক।
৮) লে-আউট নকশা ১:২০০ স্কেলে অঙ্কিত হতে হবে এবং এতে নিম্নলিখিত তথ্য থাকতে হবে।
বসবাস বা ব্যবহার সনদপত্র
১) ইমারত আংশিক বা সম্পূর্ণ নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার পর এর ব্যবহার বা বসবাসের জন্য বসবাস বা ব্যবহার সনদপত্র গ্রহণ করতে হবে।
২) বসবাস বা ব্যবহার সনদপত্র গ্রহণের জন্য আবেদন পত্রের সঙ্গে নিম্নলিখিত দলিল ও নকশাদি কর্তৃপক্ষের সংরক্ষণের জন্য দাখিল করতে হবে।
সমাপ্তি প্রতিবেদন
৩) সব নকশার ডিজাইন পর্যাপ্ততা ও উপযুক্ততার যাবতীয় দায়িত্বভার নকশার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের (স্থপতি বা প্রকৌশলী) উপর ন্যস্ত হবে।