সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১ পৌষ ১৪৩২

যশোরের দর্শনীয় স্থানগুলো কী কী

জীবন যাপন ডিসেম্বর ১৫, ২০২৫, ০৩:০০ পিএম
যশোরের দর্শনীয় স্থানগুলো কী কী

বলা হয়, “যশোরের যশ খেজুরের রস”। তবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এই প্রাচীন প্রশাসনিক শহর শুধু খেজুরের রসের জন্যই পরিচিত নয়। ইতিহাস, প্রত্নতত্ত্ব আর প্রকৃতির অনন্য সমন্বয়ে যশোর হয়ে উঠেছে ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য আকর্ষণীয় এক গন্তব্য।

ভ্রমণের জন্য যশোরের সবচেয়ে উপযোগী সময় শীতকাল। এ সময় আবহাওয়া থাকে মনোরম, রাস্তার ধারে খেজুরের রস সংগ্রহের দৃশ্যও চোখে পড়ে। হাতে যদি মাত্র দুই দিন সময় থাকে, তাহলে স্বল্প পরিকল্পনায় ঘুরে দেখা যায় যশোরের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য স্থান।

দুই দিনের ভ্রমণে ইতিহাসপ্রেমীরা ঘুরে দেখতে পারেন প্রাচীন স্থাপনা ও ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন, আর প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য রয়েছে নদী, গ্রামবাংলার সৌন্দর্য ও সবুজের ছোঁয়া। স্বল্প সময়ের মধ্যেই যশোরের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও স্থানীয় স্বাদ উপভোগ করা সম্ভব।

অল্প সময়ের ছুটিতে ভিন্ন স্বাদের ভ্রমণ চাইলে, শীতের সকালে এক গ্লাস খেজুরের রসের সঙ্গে যশোর হতে পারে আদর্শ পছন্দ।

যশোরের দর্শনীয় স্থানগুলো কী কী

 

যশোরের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে- যশোর রোড, বিনোদিয়া ফ্যামিলি পার্ক, বেনাপোল স্থল বন্দর, ঐতিহাসিক মীর্জানগর হাম্মামখানা, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের মাজার, ভরতের দেউল এবং কেশবপুরের হনুমান গ্রাম, সাথে ভৈরব নদের সৌন্দর্য ও যশোরের বিখ্যাত ফুল ও গুড়ের স্বাদ নেওয়া যেতে পারে, যা ভ্রমণকে আনন্দদায়ক করে তোলে। 
 

ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় স্থান:

যশোর রোড: জমিদার কালী পোদ্দার কর্তৃক নির্মিত এই ঐতিহাসিক সড়কটি যশোরের এক গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন।
বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের মাজার: বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের স্মৃতি বিজড়িত এই স্থানটি শ্রদ্ধার সাথে পরিদর্শন করা যায়।
মীর্জানগর হাম্মামখানা: এটি একটি প্রাচীন ঐতিহাসিক স্থাপত্য, যা পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
ভরতের দেউল: প্রাচীন স্থাপত্যের নিদর্শন হিসেবে এটি পরিচিত। 

প্রাকৃতিক ও বিনোদনমূলক স্থান

বিনোদিয়া ফ্যামিলি পার্ক: পরিবার নিয়ে ঘোরার জন্য একটি সুন্দর জায়গা।
ভৈরব নদ: যশোর ও অন্যান্য জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত এই নদটির সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
ভাসমান সেতু: মনোহর প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করার জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থান।
হনুমান গ্রাম (কেশবপুর): প্রকৃতির মাঝে একটি শান্ত ও সুন্দর গ্রাম। 

অন্যান্য আকর্ষণ

বেনাপোল স্থল বন্দর: দেশের বৃহত্তম স্থল বন্দর এবং সীমান্ত এলাকা ঘুরে দেখা যেতে পারে।
ফুল ও গুড়: যশোর ফুল চাষের জন্য বিখ্যাত, বিশেষ করে গোদখালী ও ঝিকরগাছা থেকে ফুল সরবরাহ হয়; শীতকালে এখানকার বিখ্যাত খেজুরের রস ও গুড় উপভোগ করা যায়।

যশোরে ঘুরতে গেলে যা যা দেখবেন

 

ঘুরতে কার না ভালো লাগে। যখন ইচ্ছা করে, ঘুরলে মন ভালো থাকে। তাই হঠাৎ পরিকল্পনা করি। তবে ঠিক কোথায় যাবো, বুঝে উঠতে পারছিলাম না! ভাবলাম, খুলনার পাশেই যশোর। সেখানে যাওয়া যাক। যেই ভাবা; সেই কাজ। আগের রাতে টিকিট কাটা হলো। টিকিট না কাটলে সিট পাওয়া যায় না।

যেহেতু অনেক দূরে যেতে হবে। তাই দাঁড়িয়ে যাওয়া খুবই কষ্টকর। ফলে কেটে ফেললাম টিকিট। জনপ্রতি সত্তর টাকা ভাড়া। সকাল সোয়া ৭টার ট্রেন। বাসা থেকে সাড়ে ৬টায় রওয়ানা দিলাম। স্টেশন বাসা থেকে একটু দূরে। যথারীতি সাতটা পাঁচে স্টেশনে পৌঁছলাম। ট্রেন চলে এলো, সাগরদাঁড়ি এক্সপ্রেস। এটি যশোরের। তার আগে নোয়াপাড়া ও বেনাপোল যাওয়া যায়। দেড়ঘণ্টার মতো লেগেছিল যশোর স্টেশনে পৌঁছতে।

যশোর স্টেশনে নেমে একটু সামনে গিয়ে ইজিবাইকে উঠলাম। জনপ্রতি ২০ টাকা করে মনিহার পর্যন্ত। মনিহার বিখ্যাত সিনেমা হল। অনেক পরিচিত। রাস্তা পার হয়ে গেলাম সকালে নাস্তা করতে। পরোটা আর ডাল ভাজি খেলাম। দাম ১০ টাকা করে। পরোটাগুলোর স্বাদ ছিল অসাধারণ। বেশি তেল না আবার অনেক সুন্দর।

সেখান থেকে ইজিবাইকে নিউমার্কেট। জনপ্রতি ১০ টাকা। শুনে আশ্চর্য হলাম, যশোরের একটি জায়গার নাম। নিউমার্কেট শুনে ভেবে নিয়েছিলাম এখানে মার্কেট থাকবে কিন্তু মার্কেট নেই। ২০ টাকায় চলে গেলাম জেস গার্ডেন। যার ভিডিও আগেই দেখেছিলাম। আমরা প্রায় সাড়ে নয়টার দিকে গেলাম। তখনো গার্ডেন খোলেনি। মাথাও ব্যথা করছিল অনেক। আশেপাশে কোনো ওষুধের দোকান ছিল না। একটি দোকান থেকে চা পান করলাম। খাওয়ার পর অনেকটাই ভালো লাগছিল।

দশটায় জেস গার্ডেন খুলে দিলো। জনপ্রতি ৬০ টাকা। ভেতরে প্রবেশ করতে চোখে পড়লো একটি ফোয়ারা। সামনে যতই আগাচ্ছিলাম; ততই ভালো লাগছিল। স্নিগ্ধ, নীরব পরিবেশ। গাছপালায় ঘেরা সবুজ পরিবেশ। মনটা শীতল হয়ে গিয়েছিল। অনেকক্ষণ বসে ছিলাম। এদিনই ঘটলো বাংলাদেশে সবচেয়ে ভয়ংকর ঘটনা। আগে কখনো বাংলাদেশে এত বড় ভূমিকম্প দেখিনি। বুঝে ওঠার আগেই যেন ঘটে গেল।

সাড়ে ১১টায় যাই ওয়াটার পার্কে। সামনে ঝুলন্ত একটি সেতু, সুন্দর লাগছিল। তার ওপর দিয়ে যেতে হয়। পাশে পানি অনেক সুন্দর। ওয়াটার পার্কে ঢোকার আগে ছিল দোলনা। সুন্দর বসার জায়গা। এই গার্ডেনে শিশুরা অনেক আনন্দ উপভোগ করতে পারে। বাচ্চাদের আকর্ষিত করতে হাতি, বাঘ, দোলনা, ট্রি হাউজ, স্লিপার রয়েছে। একটি সুন্দর জায়গা। ওয়াটার পার্কে ঢুকতে গেলে জনপ্রতি শুক্র- শনিবারে তিনশ টাকা করে ঢুকতে হয়। রোববার থেকে বৃহস্পতিবার জনপ্রতি ১৫০ টাকা করে ঢুকতে হয়। দুটি শিফটে সকাল ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত আর ২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। বুঝে উঠতে পারিনি, আমরা প্রায় বারোটা থেকে ১টা পর্যন্তই নিয়েছিলাম।

ভেতরে ঢুকতেই লকারের ব্যবস্থা আছে। নারী-পুরুষ আলাদা আলাদা লকার। ৫০ টাকা করে লকারের চাবি। প্রথমে ১০০ টাকা তাদের ওখানে জমা রাখতে হয়। মোট ১৫০ টাকা। তাছাড়া দুপুরের খাবারের ব্যবস্থাও আছে। স্বচ্ছ পানিতে অনেক সুন্দর ছিল সুইমিং পুলগুলো। পানি অনেক ঠান্ডা। যেহেতু শীতকাল আসছে; সেহেতু পানি ঠান্ডাই থাকবে। তাছাড়া যেখানে রোদ ছিল, সেই পুলটা কম ঠান্ডা। আমরা বের হয়ে গেলাম একটার দিকে।

হঠাৎ মাথা ব্যথা করছিল। তাই আড়াইটার দিকে বের হয়ে গেলাম। সেখান থেকে জনপ্রতি ১০ টাকা দিয়ে নিউমার্কেটে। সেখানে স্বপ্ন স্বাদ হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাবার খেলাম। গরুর কালা ভুন ১৫০ টাকা আর সাদাভাত নিলাম ২০ টাকা প্লেট। সালাদ আর ডালও দিয়েছিল। খাবারের মান ভালো। সেখান থেকে বের হয়ে গেলাম একটি রিকশা নিয়ে, ভাড়া ৩০ টাকা। উদ্দেশ্য কালেক্টর ভবন।

যশোরের বিখ্যাত কালেক্টর ভবনে গেলাম। যাওয়ার পথে রাস্তায় হাসপাতাল, বিভিন্ন দোকানপাট চোখে পড়ল। যেহেতু শহর দিয়ে যাচ্ছিলাম। অবশেষে আনুমানিক তিনটার দিকে কালেক্টর ভবনে। চোখ যেন জুড়িয়ে গেল। অনেক জায়গা নিয়ে গড়ে উঠেছে। এখানে অসংখ্য মানুষের ভিড়। একটি পুকুর রয়েছে। যেখানে অনেক রকমের মাছ। রঙিন মাছ দেখে শিশু বা বড়রা খাবার দেন। চটপটি, ফুচকা, আইসক্রিম, ঝালমুড়ি নিয়েও বসেছিলেন অনেকে। পুকুরপাড়ে বসে থাকতে খুবই ভালো লাগছিল।

আসার সময় টিকিট কেটে নিয়েছিলাম। বিকাল পাঁচটায় ট্রেন ছিল। অনেক সময় ছিল হাতে। তাই কিছুক্ষণ পুকুরপাড়ে বসেছিলাম। মাছ দেখছিলাম। যশোরের ফুচকার পরিবর্তে ভেলপুরি খেলাম। অতটা মজা ছিল না। কিন্তু ঝালমুড়ি অনেক মজা ছিল। বের হয়ে গেলাম সাড়ে চারটার দিকে। পাঁচটায় ট্রেন। দেরী না করে উঠে পড়লাম রিকশায়, ত্রিশ টাকা ভাড়া।

স্টেশনে এসে বসে থাকতে হলো। ৫টা ১৭ মিনিটে আমাদের ট্রেন এলো, রূপসা এক্সপ্রেস। উঠে পড়লাম ট্রেনে খুলনার উদ্দেশ্যে। সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটের দিকে পৌঁছে গেলাম খুলনা স্টেশনে। দিনটি অনেক সুন্দর কেটেছিল। মাঝে মাঝে এমন হুটহাট করে ঘুরলে মন্দ হয় না। স্মৃতির পাতায় আরেকটি দিন যুক্ত হয়ে গেল।

Side banner