রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
বর্তমান সময়ে অনেক পরিবারেই শিশুদের হাতে অল্প বয়সে স্মার্টফোন তুলে দেওয়া routine বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্কুলের যোগাযোগ, নিরাপত্তা এবং বিনোদনের জন্য ফোন প্রয়োজন— এমন যুক্তি সাধারণ। তবে নতুন গবেষণা বলছে, খুব তাড়াতাড়ি সন্তানকে স্মার্টফোন দিলে তার শারীরিক ও মানসিক বিকাশে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
জার্নাল অব পেডিয়াট্রিক্সে প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক বিশ্লেষণে গবেষকরা জানিয়েছেন, ১২ বছরের আগে স্মার্টফোন ব্যবহার শুরু করা শিশুদের মধ্যে স্থূলতা, ঘুমের ব্যাঘাত এবং বিষণ্ণতার হার উল্লেখযোগ্য হারে বেশি দেখা যায়। গবেষণাটি সরাসরি স্মার্টফোনকে দোষারোপ না করলেও শিশুদের অভ্যাস, আচরণ ও জীবনধারার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নির্দেশ করে।
১০ হাজার শিশুকে নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পর্যবেক্ষণ
যুক্তরাষ্ট্রের বৃহৎ “Adolescent Brain Cognitive Development (ABCD)” প্রকল্পের আওতায় ৯ থেকে ১৬ বছর বয়সী ১০,০০০-এর বেশি শিশুকে কয়েক বছর ধরে পর্যবেক্ষণ করা হয়। এরপর বিশ্লেষণ করে দেখা যায়,
গবেষকদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, ১২ বছর বয়সকে একটি সংবেদনশীল পরিবর্তনের ধাপ হিসেবে ধরা হয়— এ বয়সে দ্রুত মস্তিষ্কের বিকাশ, হরমোন পরিবর্তন এবং সামাজিক সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পায়। ফলে শিশু সহজেই সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতিক্রিয়া, লাইক-কমেন্ট এবং নোটিফিকেশনের প্রতি আবেগগতভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।
স্থূলতার কারণ: দীর্ঘক্ষণ স্ক্রিন, কম শারীরিক নড়াচড়া
যেসব শিশু অল্প বয়স থেকেই ফোন ব্যবহার করে, তাদের কার্যকলাপের বড় অংশ গেমিং, ভিডিও দেখা এবং সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রলে সীমাবদ্ধ হয়ে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে—
বিষণ্ণতার তিনটি কারণ চিহ্নিত
১২ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই স্মার্টফোন ব্যবহারের ফলে যে মানসিক চাপ তৈরি হয় তার প্রধান কারণ তিনটি—
তথ্য অনুযায়ী, ১২ বছর বয়সী স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৬.৫% শিশু বিষণ্ণতায় আক্রান্ত, যেখানে ফোনবিহীন শিশুদের ক্ষেত্রে হার ৪.৫%।
ঘুমের ওপর সরাসরি প্রভাব
স্ক্রিনের নীল আলো মেলাটোনিন নিঃসরণ কমিয়ে ঘুমের সময় ও মান কমিয়ে দেয়। অনেক শিশু রাত গভীর পর্যন্ত ভিডিও দেখে, গেম খেলে বা নোটিফিকেশনের অপেক্ষায় জেগে থাকে— যার ফলে প্রতিদিনের ঘুমের মান নিচে নেমে যায়। এই ঘুম-বঞ্চনা আবার বিষণ্ণতা ও স্থূলতার ঝুঁকি বাড়ায়— ফলে একটি নেতিবাচক চক্র তৈরি হয়।
অভিভাবকদের জন্য সতর্কবার্তা
গবেষকরা বলছেন—
গবেষণার মূল বার্তা— শিশুদের স্মার্টফোন ব্যবহার পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা নয়, বরং সঠিক বয়সে, সীমিত সময়ের জন্য এবং বাবা-মায়ের তত্ত্বাবধানে ব্যবহার করানোই নিরাপদ।