বুধবার, ০৬ নভেম্বর, ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের উৎসব ভাতা ও বাড়ি ভাড়ার বৈষম্য নিরসনে আশ্বাস দিয়েছেন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের নেতারা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা কবির বিন আনোয়ার, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক শামছুন্নাহার চাঁপার সঙ্গে শিক্ষক নেতাদের আলোচনায় সরকারি-বেসরকারি শিক্ষকদের মধ্যে থাকা বৈষম্য নিরসনের আশ্বাস এসেছে। এ আশ্বাস পেয়ে আজ বুধবার ক্লাসে ফিরেছেন মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে আন্দোলনরত শিক্ষকরা।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষক সংগঠন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক শেখ কাওছার আহমেদ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, সরকারি-বেসরকারি শিক্ষকদের মধ্যে থাকা উৎসব ভাতা, বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতার যে বৈষম্যগুলো আছে তা দূর করা হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা। তিনি, শিক্ষা উপমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক একমত হয়েছেন এ বৈষম্যগুলো দূর করার ব্যাপারে। আর জাতীয়করণের বিষয় যে কমিটি গঠনের ঘোষণা সরকারের পক্ষ থেকে এসেছিল তাতে শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে তারা আশ্বস্ত করেছেন। এরমাধ্যমে জাতীয়করণের দিকে আরো একধাপ এগিয়ে যাওয়া হলো।
তিনি আরো জানান, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের এসব বৈষম্য দূর করতে কতো টাকা প্রয়োজন হবে তা কমিটি যাচাই-বাছাই করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে পেশ করবে।
রাত সোয়া আটটায় রাজধানীর ধানমণ্ডির আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে সভা শুরু হয়। সভা শেষে রাত নয়টার দিকে ব্রিফিংয়ে অনশন ভেঙে বুধবার থেকে ক্লাসে ফিরে যাওয়ার ঘোষণা দেন শিক্ষক নেতারা।
ব্রিফিংয়ে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহবুল হাসান চৌধুরী নওফেল জানান, আমাদের মাধ্যমিক শিক্ষার বড় অংশ পরিচালিত হয় বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। তবে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষকদের মধ্যে বেতন ভাতার কিছু পার্থক্য আছে।
যেগুলো নিরসন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেগুলো আমরা নিজেরাও অনুধাবন করি। এর জন্য যে আর্থিক সংশ্লেষ প্রয়োজন তা নিরূপণে ইতোমধ্যেই আমরা একটি কর্মশালা করেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। যে কমিটি আর্থিক বিষয়টা নিয়ে কাজ করছে। আমাদের আগে দেখতে হবে সরকারি শিক্ষকের সঙ্গে বেসরকারি শিক্ষককে আর্থিক সুবিধার যে পার্থক্য আছে সেটি কিভাবে নিরসন করা যায়। সেটি আমাদের নিরসন করতে হবে। সরকারি শিক্ষকদের সঙ্গে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের উৎসব ভাতা, বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতার পার্থক্যগুলো আছে তা কিভাবে আমরা কমিয়ে আনতে পারি সে বিষয়ে প্রতিবেদন পাওয়া মাত্রই যেভাবে অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে তার সঙ্গে সঙ্গে এটারও পরিবর্তন হবে। এই বৈষম্যগুলো কিভাবে নিরসন করা যায় সে বিষয়টি আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে জানাবো।
তিনি আরো বলেন, আমাদের যে কমিটিগুলো হয়েছে সে কমিটিগুলোতে আমরা শিক্ষক প্রতিনিধিদের অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করা হবে। আমাদের দলীয় শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদকও মত দেয়ার সুযোগ পাবেন।
সরকারি-বেসরকারি শিক্ষকদের মধ্যে কোন কোন বৈষম্য দূর করা হবে জানতে চাইলে উপমন্ত্রী বলেন, জাতীয়করণের বিষয়ে যে কমিটি হয়েছে ওই কমিটির রিপোর্টের আলোকে বৈষম্য দূর করা হবে।
তিনি আরো বলেন, আমরা শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমাদের শিক্ষকদের আমরা সবসময়ই সম্মানের চোখে দেখি। তাদের ব্যথায় আমরা ব্যথিত। তাদের ক্রন্দন আমাদের সবাইকে ভাবিয়েছে। সরকারি-বেসরকারি শিক্ষকদের বৈষম্য থাকা উচিত নয়। এ বৈষম্য নিরসন করা হবে।
এর আগে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা কবির বিন আনোয়ার বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সব সময় শিক্ষাবান্ধব। তার নেতৃত্বে আমরা শিক্ষাকে এই পর্যায়ে নিয়ে আসতে পেরেছি। শিক্ষকদের জীবনমান উন্নয়ন হচ্ছে। শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসু হয়েছে। শিক্ষকরা তাদের দাবি দাওয়ার কথা আমাদের জানিয়েছেন। আমি আশা করছি তারা ক্লাসে ফিরে যাবেন।
ব্রিফিংয়ের পর পানি পান কারিয়ে বিটিএর সভাপতি বজলুর রহমান মিয়া, সাধারণ সম্পাদক শেখ কাওছার আহমেদসহ অন্যান্য শিক্ষক নেতাদের অনশন ভাঙান প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা, শিক্ষা উপমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদকসহ অন্যান্য নেতারা। এসময় বৈঠক কক্ষের বাইরে উপস্থিত বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে আসা শিক্ষক নেতারা উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) ব্যানারে গত ১১ জুলাই মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়কণের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করেন কয়েক হাজার শিক্ষক। শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি দফায় দফায় তাদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানালেও রাজপথ ছাড়েননি শিক্ষকরা। গতকাল তারা অনশন কর্মসূচি শুরু করেছিলেন। তবে রাতে ও প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনার পর মনিরা সোনার আশ্বাস পেয়ে ক্লাসে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
শিক্ষকরা বলছেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা মাত্র ২৫ শতাংশ উৎসব ভাতা, ১ হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া ও ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান। একই কারিকুলামে একই সিলেবাসে পাঠদান করিয়েও সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনে রয়েছে বিস্তর পার্থক্য। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রধানদের থেকে এক ধাপ নিচে বেতন দেয়া হচ্ছে। বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসরে যাওয়ার পর অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা পেতে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। তাছাড়া বিগত কয়েক বছর ধরে অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্ট খাতে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন থেকে অতিরিক্ত ৪ শতাংশ কেটে নেয়া হচ্ছে। এর প্রতিবাদ করা হলেও প্রতিকার পাওয়া যায়নি। বর্তমান সরকার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থা স্মার্ট করতে প্রয়োজন স্মার্ট শিক্ষক। তাই শিক্ষকের জীবনমান উন্নয়ন করতে হবে।