মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৪, ৭ কার্তিক ১৪৩১

শিক্ষককে লাঞ্ছিত ও মা‍‍`রধর করলেন চেয়ারম্যানপুত্র

জীবন যাপন আগস্ট ১৬, ২০২৩, ০৬:১৯ পিএম
শিক্ষককে লাঞ্ছিত ও মা‍‍`রধর করলেন চেয়ারম্যানপুত্র

বরগুনার বেতাগী উপজেলায় চাঁদা না দেওয়ায় মো. আবু জাফর (৪১) নামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষককে লাঞ্ছিত ও মারধর করার অভিযোগ উঠেছে সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের ছেলের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ওই শিক্ষক দুজনের বিরুদ্ধে বেতাগী থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

ভুক্তভোগী জাফর বেতাগী উপজেলার সদর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুরা গ্রামের আব্দুল হাদির ছেলে। তিনি ওই ইউনিয়নের গ্রেদ লক্ষ্মীপুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক।

অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন সদর ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির খলিফার ছেলে সদর ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. গোলাম শাহরিয়ার মনি এবং তাঁর অনুসারী মো. শাওন।

ভুক্তভোগী শিক্ষক জাফর বলেন, ‘আমাদের বিদ্যালয়ে উন্নয়নমূলক কাজের জন্য কোনো বরাদ্দ এলে চেয়ারম্যানের ছেলে মনিকে টাকা দিতে হয়। আমি বিদ্যালয়য়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক থাকাকালীন মনি বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ছিলেন। তখন বিদ্যালয়ের উন্নয়ন ফান্ডের বরাদ্দ থেকে তাঁকে কয়েকবার টাকা দিতে হয়েছে। গতকাল হঠাৎ তিনি বিদ্যালয়ে এসে আবার ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। এর প্রতিবাদ করায় মনি ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁর অনুসারী দিয়ে প্রথমে আমাকে চড়-থাপ্পড় মারেন। এরপর বিদ্যালয়ের বাইরে মনি নিজে আমাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। এ সময় বিদ্যালয়ের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক সেখানে উপস্থিত থাকলেও ভয়ে তাঁরা প্রতিবাদ করেননি।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই এলাকার একাধিক বাসিন্দা বলেন, সদর ইউপি চেয়ারম্যানের ছেলে মনি এলাকায় নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য সমালোচিত।

দুই বছর আগে মনির বাবা হুমায়ুন কবির খলিফা নিজেই অতিদরিদ্রদের জন্য ১০ টাকা কেজি চালের সুবিধাভোগীর তালিকায় মনির নাম অন্তর্ভুক্ত করে সমালোচিত হন। এ ছাড়া সদর ইউনিয়নে যেকোনো সরকারি প্রকল্পের কাজ করতে গেলে চেয়ারম্যানের ছেলেকে চাঁদা কিংবা কাজের অংশীদার করতে হয়।

তবে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে মনি বলেন, ‘আমি ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সহসভাপতি। সম্প্রতি কমিটির কাউকে না জানিয়ে কোনো রেজল্যুশন ছাড়া বর্তমান সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের উন্নয়ন ফান্ডের একটি বরাদ্দ উত্তোলন করেন। আমি ১৫ আগস্টের অনুষ্ঠান শেষে তাঁদের কাছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী শিক্ষক আবু জাফর আমাকে একটি ভাউচার দেখান। বিদ্যালয়ের সভাপতি ও বর্তমান প্রধান শিক্ষক থাকতে তিনি কীভাবে ভাউচার দেখান, জানতে চাইলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদের চেয়ার দিয়ে মারতে উদ্যত হন। আমার চাচাতো ভাই তখন এগিয়ে এলে তিনি তাঁকে চড়-থাপ্পড় দেন। উনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক থাকাকালীন তাঁর ভাইকে কমিটির সভাপতি বানাতে চেয়েছিলেন। সেই থেকে তাঁর সঙ্গে আমার দ্বন্দ্ব চলছে।’

বেতাগী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. মিজানুর রহমান খান বলেন, ‘ভুক্তভোগী শিক্ষকের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রশাসনকে বিষয়টি অবহিত করেছি। যেহেতু অভিযুক্ত আমাদের প্রতিষ্ঠানের কেউ নন, তাই ভুক্তভোগীকে আইনের আশ্রয় নেওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছি।’

বেতাগী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Side banner