শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ফেইসে পিম্পল: প্রচলিত যে ধারণাগুলোর কারণে ক্ষতি হচ্ছে স্কিন!

জীবন যাপন ডিসেম্বর ২৩, ২০২২, ০৮:১৪ পিএম
ফেইসে পিম্পল: প্রচলিত যে ধারণাগুলোর কারণে ক্ষতি হচ্ছে স্কিন!

ফেইসে একনে বা পিম্পল হলে সেগুলো দূর করার জন্য যে যা বলে তাই করার জন্য আমরা যেন একদম উঠেপড়ে লাগি। এর মধ্যে প্রচলিত কিছু কথা আছে। যেমন- রাতে ঘুমানোর আগে পিম্পলে একটু টুথপেস্ট লাগিয়ে নিলে সকালে উঠেই সেটি গায়েব হয়ে যায়! একনে প্রন স্কিনের জন্য কোনো ময়েশ্চারাইজার লাগে না, এমনকি বড়দের একনে প্রবলেমই হয় না! আপনিও কি এই কথাগুলো শুনেছেন? তবে জেনে রাখুন, এগুলো কোনো সঠিক তথ্য বা উপায় নয়, এসব তথ্যকে বলা হয় একনে মিথ। একনে নিয়ে এমন অনেক প্রচলিত ভুল ধারণা আছে। একনে মিথ সংক্রান্ত এই ভুল ধারণাগুলোই ক্লিয়ার করার চেষ্টা করবো আজকে।

‘একনে প্রন স্কিনের জন্য ময়েশ্চারাইজার দরকার হয় না’ 
একনে প্রন স্কিনের জন্য এই মিথটি বেশ কমন। কিন্তু বাস্তবতা আসলে ভিন্ন। সব ধরনের স্কিনের জন্যই যেখানে ময়েশ্চারাইজার প্রয়োজন, তখন একনে প্রন স্কিন কেন বাদ যাবে? অন্যান্য স্কিনের মতো একনে প্রন স্কিনেও ময়েশ্চারাইজার অ্যাপ্লাই করতে হবে। স্কিন বেশি ড্রাই হোক বা অয়েলি, দু ধরনের স্কিনেই একনে ব্রেকআউট হতে পারে। স্কিনের ন্যাচারাল অয়েল প্রোডাকশন ব্যালেন্স করার জন্য ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা হয়। এছাড়া এর ব্যবহারে ইনফ্ল্যামেশন কমে, স্কিন দেখতে ইয়াংগার লুকিং ও প্লাম্পি মনে হয়, ফাইন লাইনস ও রিংকেলস হওয়ার সম্ভাবনা কমে।

‘শুধু টিনেজাররাই একনে প্রবলেম ফেইস করে’ 
হ্যাঁ, এটা সত্যি যে টিনেজাররা একনে প্রবলেম বেশি ফেইস করে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, ৮৫% টিনেজারদের এই প্রবলেম হয়। তবে এটাও সত্যি যে, সব বয়সীদের মধ্যেই দিন দিন একনে প্রবলেম বাড়ছে। ২০, ৩০, ৪০, এমনকি ৫০ বছর বয়সে এসেও স্কিনে একনের দেখা মিলতে পারে। আবার যাদের টিনেজে একনে হয়েছে, এডাল্ট হওয়ার পর নতুন করে এ প্রবলেম দেখা দিতে পারে। এছাড়া প্রেগনেন্সিতে হরমোনাল চেঞ্জ, মেনোপজের কারণেও একনে হতে পারে। তাই শুধু টিনেজারদেরই একনে হয়, এমন একনে মিথ বিশ্বাস না করাই ভালো!

‘স্কিন থেকে ন্যাচারাল অয়েল রিমুভ হলেই একনে কমে যাবে!’ 
এটা সত্যি যে, স্কিনের এক্সেস অয়েল রিমুভ হলে একনে প্রবলেম কমে যায়। আমাদের স্কিনে যে ন্যাচারাল অয়েল থাকে সেটার কাজই হচ্ছে স্কিনকে প্রোটেক্টেড রাখা। তবে এই ন্যাচারাল অয়েল একবারে রিমুভ হয়ে গেলে স্কিনের প্রোটেক্টিভ ব্যারিয়ার ব্রেক হয়ে যাবে, pH ব্যালেন্স হবে না, স্কিনে ব্যাড ব্যাকটেরিয়া সহজে আক্রমণ করবে। ফলাফল, আরও ব্রেক আউটস! আর তাই, একনে প্রবলেম কমানোর জন্য ন্যাচারাল অয়েল রিমুভ করা মোটেও বেস্ট সল্যুশন নয়।

‘সানস্ক্রিন ব্যবহার করলে একনে বেড়ে যাবে!’ 
এই একনে মিথটি সত্যি হতে পারে, যদি অয়েলি স্কিনের জন্য সঠিক সানস্ক্রিন আপনি না চুজ করেন। এমন স্কিনে কেমিক্যাল সানস্ক্রিন ইউজ করলে হিট বাম্পস হতে পারে। তাই একনে প্রন স্কিনের জন্য জিংক অক্সাইড আছে এমন ফিজিক্যাল সানস্ক্রিন ইউজ করুন। ফিজিক্যাল সানস্ক্রিনে যে উপাদানগুলো থাকে সেগুলো ম্যাট ফিনিশ দেয় এবং পোরস ক্লগ করে না।

‘পিম্পল শুধু রাতেই হয়!’ 
এই তথ্যের কোনো ভিত্তি নেই। কারণ রাতারাতি স্কিনে কখনো পিম্পল হয় না। বেশ কিছুদিন ধরে স্কিন কেয়ার রুটিন ফলো না করলে এক সময় গিয়ে এই সমস্যা দেখা দেয়। সাধারণত চারটা স্টেজ শেষ করে একনে স্কিনে শো করে। স্টেজগুলো হচ্ছে-

  • এক্সেস ডেড স্কিন সেল পোরস ক্লগ করে দেয়
  • সিবামের ওভার প্রোডাকশন হয়
  • পোরসে একনে ব্যাকটেরিয়া ওভার গ্রোথ করে
  • এই ব্যাকটেরিয়া থেকে ইনফ্ল্যামেশন হয়

এই সার্কেল কখনো রাতারাতি তৈরি হয় না। বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে খুব ধীরে ধীরে এই প্রসেস চলতে থাকে। এরপর একটা সময় গিয়ে ফেইসে বা বডিতে এর দেখা মেলে। তাই এমন একনে মিথ বিলিভ না করাই ভালো!

‘ফ্রেঞ্চ ফ্রাই ও চকলেটের কারণে একনে হয়!’ 
একনে ব্রেকআউট নিয়ে এটা সম্ভবত বেশ পুরনো একটা মিথ। হেলথ ইস্যুর জন্য জাংক ফুড খাওয়াতে বারণ থাকলেও একনে ব্রেকআউটের জন্য যে এগুলো দায়ী এর কোনো সুনির্দিষ্ট ভিত্তি নেই। আসলে হাই স্টার্চ ফুড যেমন- গম, ভাত, আলু এগুলোতে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (এটি এক ধরনের পরিমাপ। কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা জাতীয় খাবার গ্রহণের ফলে ব্লাড সুগার বা রক্তে চিনির মাত্রা কতটুকু বৃদ্ধি পায় তা এর মাধ্যমে পরিমাপ করা হয়) থাকে যার কারণে অয়েল প্রোডাকশন বেশি হয় এবং একনে ব্রেক আউটস হয়। কিন্তু তেলে ভাজা খাবার খেলেই যে সেটা ইনটেস্টাইন (অন্ত্র) এর মাধ্যমে পোরসে গিয়ে একনে তৈরি করবে বিষয়টি এমন নয়।

‘শরীরের তাপমাত্রা বেশি থাকলে একনে হয়’ 
ইনফেকশন, জ্বর, থাইরয়েড ডিজঅর্ডার, এক্সারসাইজ ইত্যাদি নানা কারণে বডি হিট বেড়ে যায়। এসবের কারণে র‍্যাশ হতে পারে। কিন্তু একনের সাথে শরীরের তাপমাত্রার সম্পর্ক নেই।

‘লেমন জুস, গার্লিক ও টুথপেস্ট ইজিলি পিম্পলস কমায়!’ 
লেমন জুস ও গার্লিকে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল প্রোপার্টিজ আছে, সন্দেহ নেই। আবার এ দুটোর কারণে কিন্তু ইরিটেশন বা র‍্যাশও হতে পারে। টুথপেস্টে বেকিং সোডা ও বিভিন্ন ধরনের সিনথেটিক কম্পাউন্ড থাকে যেগুলো পিম্পলকে ড্রাই করে দেয়। কিন্তু স্কিন সেল বার্ন করে দেয়। এগুলো ব্যবহারে স্কিন ইস্যু বরং আরও বেড়ে যেতে পারে। দেখা দিতে পারে রেডনেস ও পিলিং এর সমস্যা।

‘কোষ্ঠকাঠিন্য হলে একনে হয়’
একনে নিয়ে এই কথাটি বেশ প্রচলিত। কিন্তু এই তথ্যের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। তবে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকলে অতিরিক্ত উদ্বেগ হতে পারে। যার কারণে বেড়ে যেতে পারে হরমোনের নিঃসরণ। এ থেকে একনে প্রবলেম হতে পারে। এ সমস্যা যেন না হয় সেজন্য খাদ্য তালিকায় পুষ্টিকর খাবার রাখতে হবে। যদি সমস্যা বেড়ে যায় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে ওষুধ খেতে হবে।

‘একনে নিজে থেকেই ভালো হয়ে যায়!’ 
এই মিথটিও বেশ প্রচলিত। ফেইসে একনে বাড়তে থাকলেও অনেকে ভাবেন নিজে থেকেই ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু রেগুলার স্কিন কেয়ার না করলে এক সময় একনে প্রবলেম বেড়ে যেতে পারে। আবার একনে স্পট বেশ ভিজিবল হয়ে ওঠে। তাই একনে প্রবলেম বাড়তে থাকলে ডারমাটোলজিস্টের সাথে পরামর্শ করে নেয়া উচিত।

‘পিম্পল পপ করলে তাড়াতাড়ি সেরে যাবে!’  
শুনতে সহজ মনে হলেও পিম্পল পপ করা মোটেও ভালো কাজ নয়। এতে একনের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়াগুলো পোরসের আরও ভেতরে চলে যেতে পারে, অন্য পোরসে ছড়িয়ে যেতে পারে, যার কারণে হতে পারে আরও ব্রেকআউটস। এছাড়া যত বেশি পিম্পল পপ করা বা খোঁটা হয়, তত স্কিনে স্কারস বা পোস্ট ইনফ্ল্যামেটরি হাইপারপিগমেন্টেশনের চান্স রয়ে যায়।

জানি, ফেইসে পিম্পল নিয়ে ঘুরতে কারোরই ভালো লাগে না। কিন্তু ভালো হয়, পিম্পলকে তার নিজের মতো থাকতে দিলে। এর চেয়ে বরং রেগুলার স্কিন কেয়ার রুটিন মেনটেইন করা ভালো। আবার এই সময়ের মধ্যে কিছু কাজও করা যেতে পারে। যেমন- ইনফ্ল্যামেশন কমানোর জন্য একটি পরিষ্কার পাতলা কাপড়ে আইস কিউব দিয়ে ফেইসে অ্যাপ্লাই করা যায়। এরপর বেনজয়েল পার অক্সাইড (ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলতে) অথবা স্যালিসাইলিক অ্যাসিড (ডেড স্কিন সেলস রিমুভ করে এবং রেডনেস কমায়) যুক্ত প্রোডাক্ট ইউজ করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।

ছবি ও তথ্যসূত্র: সাজগোজ

Side banner