বুধবার, ০৬ নভেম্বর, ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১
ইন্টারনেটে ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে এক এক বছর ধরে ধর্ষণ করেছে। তারপর দায়ের হওয়া মামলায় হয়েছে গ্রেপ্তার। তারপর বরখাস্তও। জামিন পেয়েই মামলা তুলে নেয়ার হুমকি দিয়েছে নির্যাতিতাকে। অবশেষে শিক্ষা ক্যাডার থেকে উপসচিব হওয়া ওই অভিযুক্তকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে সরকার। যদিও ধর্ষক এ কর্মকর্তার ফাঁসির দাবি জানিয়েছিলেন ছাত্রীরা।
মোহাম্মদপুর সরকারি কলেজের সাবেক প্রিন্সিপাল ও বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার থেকে তদবির করে উপসচিব হওয়া ওই কর্মকর্তার নাম এ কে এম রেজাউল করিম। ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দে ১৪শ বিসিএস সাধারণ শিক্ষায় প্রভাষক হিসেবে সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করেছিলেন। সর্বশেষ ছিলেন জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালকের দায়িত্বে। তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়ে জারি করা প্রজ্ঞাপন গত মঙ্গলবার প্রকাশ করা হয়েছে।
এর আগে তার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর অধীনে দায়ের করা একটি মামলায় চার্জশিট দেয়া হয়। তাকে বরখাস্ত করা হয় ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ জুন। কিন্তু সে বাদীকে মামলা তুলে নেয়ার হুমকি দেয়। পরে তার বিরুদ্ধে হুমকি ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগে আরেকটি মামলা করা হয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তার বিরুদ্ধে একটি বিভাগীয় মামলা শুরু করে এবং তাকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেয়া হয়। তদন্ত কর্মকর্তা কারণ দর্শানোর নোটিসের সন্তোষজনক জবাব পাননি। গত ১৪ আগস্ট মন্ত্রণালয় তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় এবং পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মতামত চায়। কমিশন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে সম্মত হয়। এ সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছে পাঠানো হলে তিনি বাধ্যতামূলক অবসরের অনুমোদন দেন।
এ কে এম রেজাউল করিম মূলত বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত সরকারি কলেজের অধ্যাপক। বেতন গ্রেড কম হলেও ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে কোটায় বাংলাদেশ সরকারের উপসচিব পদে পদোন্নতি বাগান। সে পদোন্নতিতে জোর তদবির চলছিলো বলেও অভিযোগ আছে।
২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে মোহাম্মদপুর সরকারি কলেজের (সাবেক কমার্শিয়াল কলেজ) প্রিন্সিপাল থাকা অবস্থায় এক ছাত্রীকে নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে কোমল পানীয় খাইয়ে অচেতন করে ধর্ষণ করে এ কে এম রেজাউল করিম রতন। সেই ঘটনা ভিডিও করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে ওই কলেজছাত্রীকে সে এক বছর ধরে ধর্ষণ করেছে। সে মামলার চার্জশিট হওয়ার পর রেজাউল করিম রতন নামের এই কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। কিন্তু জামিন-অযোগ্য মামলায় অভিযুক্ত হলেও তাকে তার জামিন হয়।
২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ৮ জুলাই মোহাম্মদপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা রেজাউল করিমের ফাঁসির দাবিতে রাজপথ অবরোধ করেছিলেন। সেদিন বিকেলে রাজধানীর আসাদগেটে আড়ংয়ের সামনের রাস্তা অবরোধ করে তারা রেজাউল করিমের ফাঁসির দাবি জানান।
২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে অক্টোবরে এক নারী তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তুলেছিলেন। সে বছরের ১২ অক্টোবর হাজারিবাগ মধুবাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
ওই নারীর অভিযোগ ছিলো, সে বছরের ১ অক্টোবর ধর্ষণের চেষ্টা চালায় উপসচিব এ কে এম রেজাউল করিম। বাধা দিলে মারধর ও হাত ভেঙে দেন তিনি। ৭ অক্টোবর তিনি হাজারীবাগ থানায় ধর্ষণচেষ্টা মামলা করেন। এর আগেও জোরপূর্বক সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা ও নির্যাতন চালানোর অভিযোগে রেজাউল করিমের নামে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ জুলাই ধানমন্ডি থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে একটি মামলা হয়। এছাড়া ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে ২ জুন গাড়ি চাপা দিয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে আরেকটি মামলা হয়েছিলো তার বিরুদ্ধে।